ডেক্সটপ কম্পিউটর না ল্যাপটপ কোনটা কিনব। ল্যাপটপ বা পিসি কোনটি কিনলে ভালো তা আলোচনা করব। Laptop vs Desktop which is better for you.
কম্পিউটার কিনতে হলে টেনশন; ডেক্সটপ কম্পিউটর না ল্যাপটপ কোনটা কিনব। Laptop vs Desktop which is better for you.
আমাদের দেশে যখন থেকে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং শুরু হওয়ার পর থেকে কম্পিউটার কেনার প্রবণতা বাড়ছে।
সমস্যা হল, ডেক্সটপ কম্পিউটার নাকি ল্যাপটপ কম্পিউটার কোনটা নিব। এই নিয়ে আমাদের দুনিয়ার দ্বিধা-দ্বন্দ। তো চলুন বিষয়টা সমাধান করা যাক।
০১. পোর্টেবিলিটি
পোর্টেবিলিটি মানে কোনো জিনিসের সহজে বহন করা যায় ও যেকোনো পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে।
যদি এক জায়গায় বসে কাজ করেন তবে ডেক্সটপ ভালো। যেমন: আপনি অফিসের কাজ বা বাড়িতে বসে কোনো কাজ করবেন।
কিন্তু আপনি যদি স্টুডেন্ট হন বা এমন ব্যাক্তি যাকে কম্পিউটার সবসময় সাথে নিয়ে ঘুরতে হবে তখন ল্যাপটপ কিনতে পারেন। ল্যাপটপের এই পোর্টেবিলিটি ফিচার সবার জানা তাই অন্য বিষয় নিয়ে আলোটনা করছি।
০২. পারফমেন্স
এই পয়েন্টটি না থাকলে আমাদের ডেক্সটপ কম্পিউটারের দরকার ছিল না। এখানেই আপনি কম্পিউটারের ও ল্যাপটপের মধ্যে বেশি পার্থক্য পাবেন।
একই কনফিগারেশনের ল্যাপটপ ও ডেক্সটপের পারফমেন্সের মধ্যে অনেক পার্থক্য হয়। একই কনফিগারেশনের বলতে একই প্রসেসর যেমন কোর-আই৭ এর ল্যাপটপ ও ডেক্সটপের পারফমেন্স-এ অনেক পার্থক্য দেখা যায়।
উদাহরণ: আপনার কোর আই ৭ এর একটি ল্যাপটপ ও একটি ডেক্সটপ আছে। দেখা যাবে ল্যাপটপের চেয়ে কয়েকগুন দ্রুতগতিতে ডেক্সটপ কাজ করতে পারবে। ডেক্সটপের ভালো কর্মদক্ষতা থাকার পিছনের কারণগুলো পাওয়ার, কুলিং সিস্টেম ও মাদারবোর্ড।
পাওয়ার:
ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যাটারি দ্বারা চালিত হওয়ায়; এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে কম পাওয়ারে চলে। এখন কমপাওয়ার খরচ করার চক্করে পড়ে পারফমেন্সে কম্প্রোমাইজ করতে হয়।
পাওয়ার সঠিকভাবে না দিলে প্রসেসরসহ সকল কম্পোনেন্ট সঠিকভাবে কাজ করে না।
ডেক্সটপ সরাসরী বৈদ্যুতিক লাইনে চালার জন্য তৈরি। তাই পাওয়ার বাচার কোনো দরকার নেই। তাই প্রসেসর ও গ্রাফিক্স সহ যত হার্ডওয়্যার আছে সবগুলো ভালোভাবে চলতে পারে। তাই ল্যাপটপের চেয়ে এর কাজের গতি বেশি।
কুলিং সিস্টেম
ল্যাপটপ অনেক হালকা ও পাতলা করে তৈরি করা হয়। যার কারণে এর ভিতরের হার্ডওয়্যারকে অনেক ছোট জায়গায় রাখতে হয়; এতে ভেন্টিলেশন কম অর্থাৎ বাতাস চলাচলের জায়গা কমে যায়।
ল্যাপটপের কুলিং ফ্যানও অনেক ছোট হয়; পাওয়ার বাচানোর জন্য কুলিং ফ্যানের গতি কম রাখা হয়। কিছু সময় চলার পর গরম হতে থাকে, আর গরম হলে হ্যাং করা শুরু করে।
ডেক্সটপের সিপিইউ অনেক বড় হয়। বলতে গেলে ছোটখাটো বাক্সের মতো। এখানে কুলিং ফ্যানও মোটামুটি ভালো ও ভেন্টিলেশনের প্রচুর জায়গা থাকে; তাই সারাদিন কাজ করলেও গতি কমবে না।
মাদারবোর্ড
ল্যাপটপের মাদারবোর্ড ছোট হওয়ায় কিছু কম্পোনেন্ট কম রাখা হয়। যেগুলো কম্পিউটার বিশেষ পারফমেন্সের জন্য ব্যবহরিত হয়। কিন্তু ডেক্সটপের মাদারবোর্ড বড় হওয়ার কারণে এগুলো করা লাগে না।
০৩. আপগ্রেড
ল্যাপটপে সবকিছু বিল্টইন দেয়া থাকে। ল্যাপটপ তৈরি করার সময় এর মধ্যে ব্যবহৃত কম্পেনেন্টে মাপ অনুযায়ী তৈরি করা হয়। তাই চাইলেও খুববেশি আগ্রেড করতে পারবেন না।
ল্যাপটপে যে কোনোকিছু আপগ্রেড করা যায় না তা কিন্তু নয়। আপগ্রেড করার ক্ষমতা কম যেমন র্যাম, হার্ডডিক্স এগুলো পাল্টানো যায়।
কিন্তু মাদারবোর্ড বা প্রসেসর এগুলো আপগ্রেড করা যায় না কারণ জায়গায় ফিটিং নিয়ে সমস্যা। অনেকসময় বড় স্ক্রিন ব্যবহারের ইচ্ছা জাগতে পারে যেটা ল্যাপটপে হয় না।
মাল্টিস্ক্রীন সুবিধা: অনেকের আবার একটা কম্পিউটারের অনেকস্ক্রিন ব্যবহারের শখ আছে। যেটা ল্যাপটপে সম্ভব নয়। এমন কোনো কাজ করতে চান যেখানে মাল্টিস্ক্রিনের দরকার হবে তাহলে ডেক্সটপ নিন।
ইউএসবি: ল্যাপটপে লিমিটেড ইউএসবি পোর্টথাকে যেখানে ডেক্সটপে অনেকগুলো থাকে। যা অনেক সময় সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়।
ডেক্সটপের সবকিছু আপগ্রেড করা যায়। সেটা হোক মাদারবোর্ড, প্রসেসর, বা মনিটর। ল্যাপটপের রিপেয়ার খরচ বেশি হয় ডেক্সটপের তুলনায়।
০৪. বাজার মূল্য
ল্যাপটপ কোম্পানি আপনাকে প্যাকেজ আকারে সবকিছু দেয়। এর দাম ডেক্সটপের তুলনায় বেশি।
ল্যাপটপের দাম বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হল, অনেক জটিল টেকনিক ও কোম্পানি মার্কেটিং।
ডেক্সটপের দাম ল্যাপটপের তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া আপনার ইচ্ছামতো মাদারবোর্ড, প্রসেসর সহ সকল কম্পোনেন্ট ফিট করতে পারবেন।
সাধারণত একই কনফিগারেশনযুক্ত ল্যাপটপ ডেক্সটপের চেয়ে দিগুণ বা তারও বেশি দামের হয়; দশ হাজার টাকা খরচ করে যে ডেক্সটপ কিনবেন তেমনই একটি ল্যাপটপ বিশ হাজার বা তারও বেশি দামের হবে।
আমি উপরে অনেক কিছু আলোচনা করলাম ডেক্সটপ ও কম্পিউপর সম্পর্কে। ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কোনটা কিনবেন সেটা একান্ত আপনার কাজের ধরণ ও ব্যাক্তিগত ইচ্ছা।
হালকা আলোচনা করব কে কোনটা কিনবেন।
আপনি যদি একজন স্টুডেন্ট হন; আপনার কলেজের ছোটখাটো প্রজেক্টের জন্য কম্পিউটার দরকার তবে ল্যাপটপ আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ। কেন ডেক্সটপ না কিনে ল্যাপটপ নিবেন।
আপনার অনেকসময় কলেজ ল্যাবে কম্পিউটার নিয়ে যেতে হতে পারে। গ্রুপ ওয়ার্কের জন্য লাইব্রেরিতে নিয়ে যেতে হেত পারে; আবার ছোট খাটো সমস্যার জন্য বন্ধুর বাসায় যাবেন। মেসে থাকলে বাসায় যাবেন।
গেমারদের জন্য ডেক্সটপ নেয়া ছাড়া উপায় নেই। ভালো গেমিং ল্যাপটপ বর্তমান বাজার হিসেবে লক্ষ টাকার উপরে। লাখ টাকা দিয়ে কিনেও হতাশ হবেন; কারণ গেমিং করার জন্য হাই পারফমেন্সের কম্পিউটার দরকার যা ল্যাপটপ দিতে পারে না।
ভিডিও এডিটিং করতে চাইলেও ডেক্সটপ কিনতে হবে। ভিডিও এডিটিং বিশেষকরে 4K ভিডিও এডিট করতে অনেক উচ্চক্ষমতার কম্পিউটার দরকার। আবার এখানে মাল্টিস্ক্রিনও দরকার তাই ডেক্সটপ বেস্ট।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কোন কম্পিউটার ভালো?
কোন কম্পিউটার নিবেন তা আপনার কাজের উপর নির্ভর করে। আপনি কোন বিষয় নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবেন তার উপর নির্ভর করবে।
এপস ডেভলপমেন্ট, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, গ্রফিক্স ,ডাটা এন্ট্রির কাজগুলো ল্যাপটপ দিয়ে চালিয়ে নিতে পারবেন।
ভিডিও এডিটিংয়ের ও গেম ডেভলপমেন্টের কাজ করতে চাইলে ডেক্সটপ নিতে হবে। ভিডিও
যারা কম্পিউটারে বড় কাজ করে যেমন ভিডিও এডিটর বা গেম ডেভলপার এদের তো টাকা নিয়ে চিন্তা নেই। এগুলো যারা করে তোদের অনেক টাকা; তাই ডেস্কটপের পাশাপাশি, সাধারণ কাজের জন্য ল্যাপটপ নিয়ে নিন, ঝামেলা শেষ।
স্টুডেন্ট ও মধ্যবিত্ত তাদের কাজ যদি ল্যাপটপ দিয়ে কোনোমতে চালানো যায় তবে ল্যাপটপ নেয়া ভালো। এটি সবজায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন।
ডেক্সটপ নিলে বিষয়টা এমন যে, আপনার একটা খুব ধারালো তলোয়ার আছে যেটাকে যুদ্ধময়দানে বয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। তাহলে তলোয়ার থেকে আপনার কোনো লাভ নেই। স্টুডেন্ট ও মধ্যবিত্তদের জন্য বিষয়টা কিছু কিছু সময় এমন হবে।
ডেক্সটপ ও ল্যাপটপের মধ্যে কোনটা কিনবেন এটা বলা সত্যিই কঠিন; কারণ কেউ কারোর জায়গা নিতে পারবে না। একেকটি একেক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়।