আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে? Charles Babbage কে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে। তার হাত ধরেই আধুনিক কম্পিউটারের যাত্রা শুরু।
বর্তমান সময়ে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি। বর্তমানে বিনোদন থেকে কাজ সবকিছুই কম্পিউটারে করে থাকি।
কেনাকাটা শপিং , শিক্ষা, অফিস সবকিছুতেই কম্পিউটারের ব্যবহার লক্ষনীয়। তাইতো দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কম্পিউটার আমাদের নিত্যপণ্য হয়ে উঠেছে।
আপনি তো প্রতিদিন কম্পিউটার ব্যবহার করেন। নিজেকে কখনও প্রশ্ন করেছেন কম্পিউটার কাকে বলে?
অনেকে আবার বলবে আমিতো মোবাইল ব্যবহার করি 🙂 কিন্তু আপনি কি জানেন বর্তমানের মোবাইলগুলো কম্পিউটার ক্যাটাগরিতে পড়ে।
মোবাইল শুধুমাত্র কথা বলার জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু বর্তমানের স্মার্টফোনে অনেককিছুই আছে; তাই একে মিনি কম্পিউটার বললে ভুল কিছু বলা হবে না।
“আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে ? Who invented computer in bangla?”
কম্পিউটার কাকে বলে?
গণনাযন্ত্র, সংগনক বা কম্পিউটার হল এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে।
কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক “কম্পিউট” (compute)শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র।
কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে।
সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব।
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে ? Who invented computer in bangla?”
কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট/ অংশ
- সি.পি.ইউ (CPU)
- ইনপুট
- আউটপুট
সিপিইউ (CPU) : Central processing unit পূর্ণরূপ থেকেই বোঝাযায় এখান থেকে সবকিছুর প্রসেস চলে। সিপিইউ তে থাকে প্রসেসর, যেটা কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয়ে থাকে।
কম্পিউটারের যত কমান্ড এক্সিকিউট সহ সকল হিসাব নিকাশ করে প্রসেসর।
সিপিইউতে থাকে মাদারবোর্ড নামের অনেক বড় একটি ইলেকট্রনিক্স সার্কিট। কম্পিউটার মাদারবোর্ড ছাড়া অচল। কম্পিউটারের যাবতীয় যন্ত্রাংশ এখানে সংযুক্ত থাকে।
সিপিইউতে এগুলো বাদেও আরো অনেককিছু থাকে। আমি কম্পিউটারের ইতিহাস বলতে বেশি আগ্রহী তাই আর আলোচনা করলাম না।
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে
কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস
প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত।
পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়।
এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গণনা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গণনা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা (যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে) প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন চার্লস ব্যাবেজ।
তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine)। এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় (১৮৩৩ সালে) তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারণা লাভ করেন।
কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে পারেননি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে।
১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি ও আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা পিসি (PC)। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামের ভাষা, অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম। এরসাথে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবার।
কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) বা আইটি (IT) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ দখল করেছে এবং কর্মসংস্থান হয়ে পড়েছে অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর।
“আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে”
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এম কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি।
এর পর একের পর এক উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি। আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কমপ্যাটিবল কম্পিউটার (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপকহারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
একই সময় আই.বি.এম কোম্পানির পাশাপাশি অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেট (Apple Computer Inc) তাদের উদ্ভাবিত অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ (Apple-Macintosh) কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে।
কিন্তু অ্যাপল কোম্পানি তাদের কমপ্যাটিবল কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে কোনোরূপ উদারতা প্রদর্শন না করায় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য থেকে যায় অত্যধিক বেশি, যার ফলে অ্যাপল তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি।
“আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে”
তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবহারিক সুবিধার কারণে মূলত মুদ্রণ শিল্পে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো।
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে
১৮২২ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ যার ইংরেজী নাম Charles Babbage গণিত বিষয়ক হিসাবের নিমিত্তে উন্নত ধরনের ডিফারেন্স ইঞ্জিন তৈরির আংশিক কাজ করেন।

কিন্তু অধিক পরিমাণ যান্ত্রিক সরঞ্জাম নিখুঁতভাবে তৈরি করা সম্ভব না হওয়ায় ডিফারেন্স ইঞ্জিনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তারপর ১৮৩৩ সালে তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামক যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরির প্লান করেন এবং ইঞ্জিনের নকশা তৈরি করেন।
কিন্তু তাঁর যন্ত্র তৈরি করতে দেরি হওয়ায় সরকার ১৭০০০ পাউন্ড ব্যয় করার পর এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্ধ বন্ধ করে দেয়। চার্লস ব্যাবেজের বাবা ছিলেন স্বচ্ছল ব্যবসায়ী ।
তার বাবার মৃত্যুর পর চার্লস ব্যাবেজে উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার সম্পত্তির মালিক হন এবং তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজ করচে এই প্রকল্পে গবেষণা চালিয়ে যান।
ব্যাবেজের অ্যাালিটিক্যাল ইঞ্জিন তৈরির পরিকল্পনায় আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা বদ্ধমূল ছিল বিধায় চার্লস ব্যাবেজকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে।
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে? আধুনিক কম্পিউটারের জনক চার্লস ব্যাবেজক (Charles Babbage)
ডিজিটাল কম্পিউটারের জনক কে?
জন ভন নিউম্যান- একজন হাঙ্গেরীয় বংশদূত ও মার্কিন গণিতবিদ ছিলেন। তাকে ডিজিটাল কম্পিউটারের জনক বলা হয়। জন ভন নিউম্যান কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় অপারেটর তত্ত্ব ব্যবহারের অগ্রদূত সেটতত্ত্ব, জ্যামিতি, প্রবাহী গতিবিদ্যা, অর্থনীতি, যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামিং, কম্পিউটার বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার এই অসামান্য অবদানের জন্য আধুনিক কম্পিউটারের মূল স্থাপত্যকে তাঁর নাম অনুসারে ভন নিউম্যান স্থাপত্য বলা হয়ে থাকে।
“আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে”
সুপার কম্পিউটারের জনক কে
কন্ট্রোল ড্যাটা কর্পোরেশন (সিডিসি) এর সেইমার ক্রে ১৯৬০ সালের দিকে সর্বপ্রথম সুপার কম্পিউটারের একটি ডিজাইন তৈরি করেন এবং তা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেন। তাই সেইমার ক্রে হচ্ছেন সুপার কম্পিউটারের জনক।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল সুপার কম্পিউটার জাপানের ফুকাগুর কম্পিউটার । ২য় সামিট(USA) ৩য় চীনের।
শেষকথা
তহলে আমরা জানলাম: আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে? এবং একটি আধুনিক কম্পিউটারের কিকি থাকে।
আরো জানলাম কম্পিউটার কাকে বলে। বর্তমানে তো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কথা শেনা যাচ্ছে। যেটা বর্তমানের কম্পিউটারের চেয়ে কয়েকগুন বেশি শক্তিশালী হবে।
“আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে”
ধন্যবাদ— শেয়ার দিবেন