প্রতিটি মুসলিমের জেনে রাখা উচিত যে, আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহভিত্তিক বিশুদ্ধ ‘আমল ছাড়া অন্যকিছু আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার নিকট গৃহীত হবে না; আর বিশুদ্ধ ‘আমলের অপরিহার্য পূর্বশর্ত ‘‘ইসলাহুল ‘আকীদাহ বা ‘আকীদাহ্ সংশোধন করা। কারণ বিশুদ্ধ ‘আকীদাহ সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন এবং তা মনে-প্রাণে লালন করা ব্যতীত একজন মুসলিম আপাদমস্তক খাঁটি মুমিন হতে পারবে না।
এটা অপ্রিয় সত্য যে, বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ তাওহীদ তথা একত্ববাদ, আল্লাহর পরিচয় ও অবস্থান এবং রিসালাত ও ইসলামের অন্যান্য হুকুম-আহকাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ‘আকীদাহ্ পোষণ করে থাকেন: তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, ঈমানের অস্তিত্বই হুমকির মুখে নিপতিত হয়েছে।
সে সকল বিভ্রান্ত মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথের দিশা দিতে ঈমানী দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের এ প্রয়াসকে কবুল করুন এবং পথহারা পথিককে সিরাতে মুস্তাকিমের দিশা দান করুন। আমীন।
১. প্রশ্ন: আল্লাহ কোথায়?
উত্তর: মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত মহান আরশের উপরে আছেন।
দলীল:
কুরআন, সুন্নাহ ও প্রসিদ্ধ চার ইমামের উক্তি- মহান আল্লাহর বাণী:
“রহমান (পরম দয়াময় আল্লাহ) ‘‘আরশের উপর উঠেছেন।” [সূরা ত্বা-হা: ২০: ৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন দাসীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন:
“আল্লাহ কোথায়? দাসী বলল: আসমানের উপরে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি কে? দাসী বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: একে আজাদ (মুক্ত) করে দাও, কেননা সে একজন মুমিনা নারী।” (সহীহ মুসলিম: ১২২৭)
ইমাম আবু হানীফাহ রহ. বলেন, “যে ব্যক্তি বলবে, আমি জানি না, আমার রব আসমানে না জমিনে – সে কাফির। অনুরূপ (সেও কাফির) যে বলবে, তিনি আরশে আছেন, তবে আমি জানি না, ‘আরশ আসমানে না জমিনে। (আল ফিকহুল আকবার: ১/১৩৫)
২. প্রশ্ন: মহান আল্লাহ ‘আরশে আযীমের উপরে আছেন-এটা আল-কুরআনের কোন সূরায় বলা হয়েছে?
উত্তর: এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট সাতটি আয়াত রয়েছে: ৭:৫৪, ১০:৩, ১৩:২, ২০:৫, ২৫:৫৯, ৩২:৪, ৫৭:৪
৩. প্রশ্ন : পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, ‘‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”-[সূরা আল বাকারাহ্ ২:১৫৩], ‘‘আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছে-[সূরা আল-বাকারাহ্ ২:১৯৪), ‘‘আর আমরা গ্রীবাদেশ/শাহারগের থেকেও নিকটে”- [সূরা ক্ব-ফ :১৬], ‘‘যেখানে তিনজন চুপে চুপে কথা বলেন সেখানে চতুর্থজন আল্লাহ” [সূরা আল-মুজাদালাহ্:৭] -তাহলে এই আয়াতগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কী?
উত্তর: মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে সকল সৃষ্টির সাথে আছেন। অর্থাৎ তিনি সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত ‘আরশের উপর থেকেই সব কিছু দেখছেন, সব কিছু শুনছেন, সকল বিষয়ে জ্ঞাত আছেন। সুতরাং তিনি দূরে থেকেও যেন কাছেই আছেন।
সাথে থাকার অর্থ, গায়ে গায়ে লেগে থাকা নয়। আল্লাহর সাথে ও কাছে থাকার অর্থ হলো জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতার মাধ্যমে, আর স্ব-সত্তায় তিনি ‘আরশের উপর রয়েছেন।
০৪. প্রশ্ন : ‘‘মুমিনের কলবে আল্লাহ থাকেন বা মুমিনের কলব আল্লাহর ‘আরশ’ কথাটির ভিত্তি কী?
উত্তর: কথাটি ভিত্তিহীন, মগজপ্রসূত, কপোলকল্পিত। এর সপক্ষে একটিও আয়াত বা সহীহ হাদীস নেই।
আছে জনৈক কথিত বুজুর্গের উক্তি, (قلب المؤمن عرش الله) ‘‘মুমিনের কলব আল্লাহর ‘আরশ। (আল মাওযূ‘আত লিস্ সাগানী বা সাগানী প্রণীত জাল হাদীসের সমাহার/ভান্ডার- ১/৫০, তাযকিরাতুল মাউযূ‘আত লিল-মাকদিসী ১/৫০)
সাবধান!!! আরবী হলেই কুরআন-হাদীস হয় না। মনে রাখবেন, দীনের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ ব্যতীত বুজুর্গের কথা মূল্যহীন-অচল।
তবে এ কথা অমোঘ সত্য যে, মুমিনের কলবে মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসা আর আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকারের অদম্য মোহ স্পৃহা থাকে।
‘‘বরং মহান আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করে তুলেছেন এবং সেটাকে সৌন্দর্য মন্ডিত করেছেন তোমাদের হৃদয়ের গহীনে।” [সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:৭]
০৫. প্রশ্ন : “মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান” কথাটা কি সঠিক?
উত্তর: কথাটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, যদি এর দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয় যে, ‘‘স্বয়ং আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান” তাহলে সঠিক নয়। আর যদি এর দ্বারা বুঝানো হয় যে, ‘‘মহান আল্লাহর ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান” তাহলে সঠিক; কেননা আমরা জানি আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী প্রেরণ করতে মাধ্যম হিসেবে জিবরীল আলাইহিস সালামকে ব্যবহার করেছেন।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে অত্যন্ত নিকট থেকে কথোপকথন করার জন্য মি‘রাজ রজনীতে সাত আসমানের উপর আরোহণ করেছিলেন। [সূরা আন-নাজম ৫৩:০১-১৮]
অতএব ‘‘মহান আল্লাহ স্ব-সত্তায় সর্বত্র বিরাজমান”এ কথাটি বাতিল, কুরআন-হাদীস পরিপন্থী ও আল্লাহর জন্য মানহানীকর। বরং তাঁর জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান।
০৬. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর অবয়ব সম্পর্কে একজন খাঁটি মুসলিমের ‘‘আকীদাহ্-বিশ্বাস কীরূপ হবে।
উত্তর: মহান আল্লাহ মানব জাতিকে আল-কুরআনের মাধ্যমেই পথের দিশা দান করেছেন। আল্লাহ বলেন:
‘‘(কিয়ামাতের দিন) ভূপৃষ্ঠে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। (হে রাসূল) আপনার রবের মহিমাময় ও মহানুভব চেহারা (সত্তাই) একমাত্র অবশিষ্ট থাকবে।” [সূরা আর-রহমান ৫৫: ২৬-২৭]
এ আয়াতে মহান আল্লাহর চেহারা প্রমাণিত হয়।
মহান আল্লাহর হাত আছে। এর স্বপক্ষে আল কুরআনের দলীল:
‘‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! আমি নিজ দু’হাতে (আদমকে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সামনে সাজদাহ্ করতে তোমাকে কিসে বাধা দিলো?” [সূরা সাদ ৩৮:৭৫]
অনুরূপ ভাবে মহান আল্লাহর চক্ষু আছে। যেমন: আল্লাহ নবী মূসা আলাইহিস সালামকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন:
“আর আমি আমার পক্ষ হতে তোমার প্রতি ভালোবাসা বর্ষণ করেছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও।” [সূরা ত্বাহা ২০:৩৯]
তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন:
“(হে রাসূল!) আপনি আপনার রবের নির্দেশের কারণে ধৈর্যধারণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি আমার চোখেন সামনেই রয়েছেন।” [সূরা আত-তূর ৫২:৪৮]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা শ্রবণ করেন ও দেখেন।” [সূরা আল-মুজা-দালাহ্ ৫৮:১]
উল্লিখিত আয়াতসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহর চেহারা, হাত, চোখ, আছে; তিনি অবয়বহীন নন; বরং তাঁর অবয়ব রয়েছে যদিও আমরা সেটার ধরণ বা রূপ সম্পর্কে কোনো কিছুই জানি না। তবে আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহর শ্রবণ-দর্শন ইত্যাদি মানুষের শ্রবণ-দর্শনের অনুরূপ নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
‘‘আল্লাহর সাদৃশ্য কোনো বস্তুই নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন।” [সূরা আশ্-শূরা ৪২:১১]
মহান আল্লাহর এ তিনটি গুণাবলীসহ যাবতীয় গুণাবলীর ক্ষেত্রে চারটি বিষয় মনে রাখতে হবে:
১. এগুলো অস্বীকার করা যাবে না
২. অপব্যাখ্যা করা যাবে না
৩. সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দেয়া যাবে না এবং
৪. কল্পনায় ধরণ, গঠন আঁকা যাবে না।
০৭. প্রশ্ন : একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েবের খবর বলতে পারে কী?
উত্তর: অবশ্যই না; একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টির আর কেউ গায়েব এর খবর রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
‘‘সে মহান আল্লাহর কাছে গায়েবী জগতের সকল চাবিকাঠি রয়েছে।” সেগুলো একমাত্র তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আর কেউই জানে না।” [সূরা আল-আন‘আম ৬:৫৯]
০৮. প্রশ্ন : আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী গায়েব এর খবর বলতে পারতেন?
উত্তর: আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর জানতেন না। তবে মহান আল্লাহ ওয়াহীর মাধ্যমে যা তাঁকে জানিয়েছেন- তা ব্যতীত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
‘‘(হে মুহাম্মাদ!) আপনি ঘোষণা করুণ, একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমার কোনোই হাত নেই। আর আমি যদি গায়েব জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোনো প্রকার অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করতে পারত না।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭:১৮৮]
০৯. প্রশ্ন: ইহ-জীবনে মুমিন বান্দাদের পক্ষে স্বপ্নযোগে বা স্বচক্ষে মহান আল্লাহর দর্শন লাভ করা সম্ভব কি?
উত্তর: আল-কুরআনের আয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, দুনিয়ার জীবনে একনিষ্ঠ মুমিন বান্দাগণও স্বচক্ষে মহান আল্লাহকে দেখতে পাবেন না।
আল্লাহ বলেন:
‘‘তিনি (মুসা আলাইহিস সালাম) আল্লাহকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে আমার রব! তোমার দীদার আমাকে দাও; যেন আমি তোমার দিকে তাকাব। মহান আল্লাহ (মূসাকে) বলেছিলেন, হে মূসা! তুমি আমাকে কখনো দেখতে পাবে না।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭:১৪৩]
এ আয়াতসহ অন্যান্য আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টিজীবের কেউ এমনকি নবী রাসূলগণও আল্লাহকে চর্মচক্ষু দ্বারা দুনিয়ার জীবনে দেখতে পান নি। তবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নযোগে মহান আল্লাহকে দেখেছেন। (সিলসিলা সহীহাহ্ ৩১৬৯)
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্ন দেখাকে পুঁজি করে যে সকল কথিত পীর-ফকীর মহান আল্লাহকে মুহুর্মূহু দর্শন করার দাবী করেন তা মিথ্যা বৈ কিছু নয়।
আর যারা তাদের এ কথার উপর অণু পরিমাণও বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারাও ধোঁকা ও প্রতারণার সাগরে নিমজ্জিত।
১০. প্রশ্ন: কথিত আছে যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ আলাইহিস সালাম নূরের তৈরি। এ কথার কোনো ভিত্তি-প্রমাণ আছে কি?
উত্তর: আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের নয়, বরং অন্যান্য মানুষ যেভাবে জন্মলাভ করেন সেভাবে তিনিও জন্মলাভ করেছেন। আর প্রথম মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা মাটি দ্বারা তৈরী করেছেন একজন প্রকৃত মুসলিমকে অবশ্যই এ বিশ্বাস পোষণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন:
‘‘(হে রাসূল! আপনার উম্মাতকে) আপনি বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি ওয়াহী নাযিল হয় যে, নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ বা উপাস্য একজনই।” [সূরা আল-কাহাফ ১৮:১১০]
এভাবেই একশ্রেণীর মানুষ বলে থাকেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ তা‘আলা আসমান-জমিন, ‘আরশ কুরসী কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এ কথাগুলিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও সর্বৈব মিথ্যা। কারণ, কুরআন ও সহীহ হাদীসে এর সপক্ষে কোনোই দলীল-প্রমাণ নেই বরং এ সকল অবান্তর কথাবার্তা আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থী। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে,
‘‘আমি জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ‘ইবাদত করার জন্য।” [সূরা আয-যারিয়াত ৫১:৫৬)]
১১. প্রশ্ন: অনেকেই এ ‘আকীদাহ্ বিশ্বাস পোষণ করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যান নি বরং তিনি জীবিত; এ সম্পর্কিত শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।”
১২. প্রশ্ন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যে সালাত পাঠ করি, তা-কি তাঁর নিকট পৌঁছে?
উত্তর: আমাদের পঠিত সালাত আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে পৌছান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না এবং আমার কবরকে উৎসবস্থলে পরিণত করো না; আর আমার উপর সালাত পাঠ করো; কেননা, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের পঠিত সালাত আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
১৩. প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা কোনো মৃত বা অনুপস্থিত ওলী-আওলিয়াকে মাধ্যম করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা বা বিপদাপদে সাহায্য চাওয়া যাবে কি?
উত্তর: নবী-রাসূল, ওলী-আওলিয়াসহ সকল সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার কাছেই মানুষ যাবতীয় চাওয়া-পাওয়ার প্রার্থনা করবে। আল্লাহ বলেন:
“তোমরা আল্লাহর কাছে (সরাসরি) রিযিক চাও এবং তাঁরই ‘ইবাদাত করো।” [সূরা আল-‘আনকাবূত ২৯:১৭]
“বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ডাকে (আল্লাহ ছাড়া) কে সাড়া দেয়, যখন সে ডাকে; আর (আল্লাহ ছাড়া) কে তার কষ্ট দূর করে?” [সূরা আন্-নামল ২৭:৬২]
উল্লিখিত আয়াতদ্বয় ছাড়াও আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, আল্লাহ ছাড়া মৃত বা অনুপস্থিত কোনো ওলী-আওলিয়া, পীর-মাশায়েখ এমনকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও মাধ্যম করে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া জায়েয নয়। পক্ষান্তরে মানুষের যা কিছু চাওয়া-পাওয়া রয়েছে, তা সরাসরি আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে।
১৪. প্রশ্ন: উপস্থিত জীবিত ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চাওয়া সম্পর্কিত শরী‘আতের বিধান কী?
উত্তর: উপস্থিত জীবিত ব্যক্তি যে সমস্ত বিষয়ে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন, সে সমস্ত বিষয়ে তার কাছে চাওয়া যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমরা পূণ্য তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য করো। তবে পাপকার্যে ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে তোমরা একে অপরকে সাহায্য করো না।” [সূরা আল মায়িদাহ্ ৫:২]
১৫. প্রশ্ন : মহান আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর প্রিয় বান্দা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মনে প্রাণে ভালোবাসা ও আনুগত্য করার উত্তম পদ্ধতি কী?
উত্তর: মহান আল্লাহকে মনেপ্রাণে ভালোবাসার উত্তম পদ্ধতি হলো-খালেস অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় হুকুম-আহকাম দ্বিধাহীনচিত্তে মেনে নিয়ে তাঁর আনুগত্য করা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিপূর্ণ অনুসরণ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যেকটি সুন্নাতকে দ্বিধাহীনচিত্তে যথাযথভাবে অন্তর দিয়ে ভালোবাসা, আর সাধ্যানুযায়ী ‘আমল করার চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ বলেন:
‘‘অতএব (হে মুহাম্মাদ!) আপনার রবের কসম! তারা কখনই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মাঝে সৃষ্ট কোনো ঝগড়া-বিবাদের ব্যাপারে তারা আপনাকে ন্যায়বিচারক হিসেবে মেনে নিবে। অতঃপর তারা আপনার ফায়সালার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা রাখবে না এবং তা শান্তিপূর্ণভাবে কবূল করে নিবে।” [সূরা আন্-নিসা ৪:৬৫]
১৬. প্রশ্ন: বিদ‘আতের পরিচয় এবং বিদ‘আতী কাজের পরিণতি সম্পর্কে শরী‘আতের ফায়সালা কী?
উত্তর: সাধারণ অর্থে সুন্নাতের বিপরীত বিষয়কে বিদ‘আত বলা হয়। আর শার‘ঈ অর্থে বিদআত হলো: ‘‘আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে নতুন কোনো প্রথা বা ‘ইবাদাতের প্রচলন করা, যা শরী‘আতের কোনো সহীহ দলীল-প্রমাণের উপর ভিত্তিশীল নয়।” (আল ই‘তিসাম ১/১৩ পৃষ্ঠা)।
বিদ‘আতীর কাজের পরিণতি ৩টি:
১. ঐ বিদ‘আতী কাজ বা আমল আল্লাহর দরবারে কখনোই গৃহীত হবে না।
২. বিদ‘আতী কাজ বা আমলের ফলে মুসলিম সমাজে গোমরাহী বিস্তার লাভ করে এবং
৩. এ গোমরাহীর চূড়ান্ত ফলাফল বা পরিণতি হলো, বিদ‘আত কার্য সম্পাদনকারীকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের শারী‘আতে এমন নতুন কিছু সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “আর তোমরা দীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন করা হতে সাবধান থেকো! নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সংযোজন বিদ‘আত, আর প্রত্যেকটি বিদ‘আত গোমরাহীর পথনির্দেশ করে, আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হলো জাহান্নাম।” (আহমাদ, আবূ দাঊদ, আত্ তিরমিযী)
উল্লেখযোগ্য বিদ‘আত হলো:
১. ‘মীলাদ মাহফিল-এর অনুষ্ঠান করা।
২. ‘শবে বরাত’ পালন করা।
৩. ‘শবে মিরাজ উদযাপন করা।
৪. মৃত ব্যক্তির কাযা বা ছুটে যাওয়া নামাযসমূহের কাফ্ফারা আদায় করা।
৫. মৃত্যুর পর তৃতীয়, সপ্তম, দশম এবং চল্লিশতম দিনে খাওয়া-দাওয়া ও দো‘আর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
৬. ইসালে সাওযাব বা সাওয়াব রেসানী বা সাওয়াব বখশে দেওয়ার অনুষ্ঠান করা।
৭. মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য অথবা কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশে খতমে কুরআন অথবা খতমে জালালীর অনুষ্ঠান করা।
৮. উচ্চকণ্ঠে বা চিৎকার করে যিকর করা।
৯. হালকায়ে যিকরের অনুষ্ঠান করা।
১০. মনগড়া তরীকায় পীরের মূরীদ হওয়া।
১১. ফরয, সুন্নাত, নফল ইত্যাদি সালাত শুরু করার পূর্বে মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত পড়া।
ইত্যাদি।
১৮. প্রশ্ন: মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস বলে মানুষের মাঝে বর্ণনা করা বা বই-পুস্তকে লিখে প্রচার করার পরিণতি কী?
উত্তর: যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করে মানুষের কাছে বর্ণনা করে তার পরিণতি জাহান্নাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা বলবে, তার আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।” (বুখারী ১/৫২, মুসলিম-১/৯)
১৯. প্রশ্ন: আমরা সাধারণত ‘ইবাদাত বলতে বুঝি কালেমাহ্, সালাত, যাকাত, সওম ও হাজ্জ ইত্যাদি। মূলত ‘ইবাদাতের সীমা-পরিসীমা কতটুকু?
উত্তর: ‘‘ইবাদাত অর্থই হচ্ছে প্রকাশ্য এবং গোপনীয় ঐ সকল কাজ ও কথা, যা আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসেন বা যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
ইবাদাতের উল্লিখিত সংজ্ঞা থেকেই বুঝা যায় যে, ‘‘ইবাদাত শুধুমাত্র কালেমাহ, সালাত, যাকাত, সওম ও হাজ্জ ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি ক্ষণে আল্লাহর ‘ইবাদাত নিহিত রয়েছে। আল্লাহ বলেন:
“(হে রাসূল !) আপনি বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী এবং আমর জীবন ও মরণ সবকিছুই মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত যিনি সমগ্র বিশ্বের রব্ব।” [সূরা আল-আন‘আম ৬:১৬২]
এ আয়াত এটাই প্রমাণ করে যে, মানব জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের ভাল কথা বা কাজ ‘ইবাদাতের মধ্যে গণ্য। যেমন- দো‘আ করা, বিনয় ও নম্রতার সাথে ‘ইবাদাত করা, হালাল উপার্জন করা ও হালাল খাওয়া, দান-খায়রাত করা, পিতা-মাতার সেবা করা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করা, সর্বাবস্থায় সত্যাশ্রয়ী হওয়া, মিথ্যা বর্জন করা ইত্যাদি ‘ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত।
২০. প্রশ্ন : কোন পাপ কর্মটি মহান আল্লাহুর কাছে সবচেয়ে বেশি অপছন্দনীয় এবং সর্ববৃহৎ পাপ বলে গণ্য হবে?
উত্তর: মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি অপছন্দনীয় এবং সর্ববৃহৎ পাপ বলে গণ্য হবে শির্কের গুনাহসমূহ। মহান আল্লাহ এ গুনাহ থেকে বিরত থাকতে তাঁর বান্দাকে বারংবার সতর্ক করেছেন।
‘‘লোকমান আলাইহিস সালাম তাঁর ছোট্ট ছেলেটিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, হে আমার ছেলে! তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করবে না। কেননা শিরক হলো সবচেয়ে বড় যুলম (অর্থাৎ বড় পাপের কাজ)।” [সূরা লুকমান: ৩১:১৩]
২১. প্রশ্ন : শিরক কী? বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত এমন কাজসমূহই বা কী?
উত্তর: আরবী শিরক শব্দের অর্থ অংশী স্থাপন করা। পারিভাষিক অর্থে শিরক বলা হয়- কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা তাঁর ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক করা। বড় শিরক হলো: সকলপ্রকার ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্যেই নিবেদিত; কিন্তু সে ইবাদাতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে শরীক করা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ ছাড়া কোনো পীর-ফকীর বা ওলী-আওলিয়াদের কাছে সন্তান চাওয়া, ব্যবসায়-বাণিজ্যে আয়-উন্নতির জন্যে অথবা কোনো বিপদ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো পীর-ফকীরের নামে বা মাযারে মান্নত দেওয়া, সাজদাহ করা, পশু যবেহ করা ইত্যাদি বড় শিরক বলে গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন:
“(হে মুহাম্মাদ) আপনি আল্লাহ ব্যতীত এমন কোনো কিছুর নিকট প্রার্থনা করবেন না, যা আপনার কোনো প্রকার ভালো বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। কাজেই হে নবী! আপনি যদি এমন কাজ করেন, তাহলে আপনিও যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।” ([সূরা ইউনুস ১০:১০৬]
বড় শিরকের সংখ্যা নির্ধারিত নেই; তবে বড় শিরকের শাখা-প্রশাখা অনেক। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া।
২. একক আল্লাহ ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য পশু যবেহ করা।
৩. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে মানৎ করা।
৪. কবরবাসীর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কবরের চারপাশে তাওয়াফ করা ও কবরের পাশে বসা।
৫. বিপদে-আপদে আল্লাহ ছাড়া অন্যের অন্যের উপর ভরসা করা। ইত্যাদি ছাড়াও এ জাতীয় আরো অনেক শিরক রয়েছে। যা বড় শিরক হিসেবে গণ্য হবে।
২২. প্রশ্ন: বড় শিরকের পরিণতি কী হতে পারে?
উত্তর: বড় শিরকের দ্বারা মানুষের সৎ ‘আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যায়, জান্নাত হারাম হয়ে যায় এবং চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়। আল্লাহ বলেন:
“(হে নবী! আপনি যদি শিরক করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনার ‘আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। আর আপনি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।” [সূরা আয-যুমার ৩৯:৬৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
“নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার বানায়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন, তার চিরস্থায়ী বাসস্থান হবে জাহান্নাম। এ সমস্ত যালিম তথা মুশরিকদের জন্য কিয়ামাতের দিন কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।” [সূরা আল-মায়িদাহ্ ৫:৭২]
২৩. প্রশ্ন: আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে অর্থাৎ পীর-ফকীর, ওলী-আওলিয়ার নামে বা মাযারে মানৎ করার শার‘ঈ বিধান কী?
উত্তর: একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে মানৎ করা যাবে না। কারণ নযর বা মানৎ একটি ইবাদাত আর সকল প্রকার ইবাদাত কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত; কোনো নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম বা পীর-ফকীর, ওলী-আওলিয়া অথবা মাযারে নযর বা মান্নত করা যাবে না, করলে তা শিরকী কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর নামে নযর বা মান্নত করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে মান্নত করে সে যেন তা পূর্ণ করার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মান্নত করে সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে- (অর্থাৎ মান্নত যেন আদায় না করে)।” (বুখারী ৬৬৯৬, ৬৭০০; আবু দাঊদ ৩২৮৯)
২৪. প্রশ্ন: কবর বা মাযারে গিয়ে কবরবাসীর কাছে কিছু প্রার্থনা করা যাবে কী?
উত্তর: কবরে বা মাযারে গিয়ে কিছু প্রার্থনা করা শির্ক। কারণ, কবরবাসীর কোনোই ক্ষমতা নেই যে, সে কারো কোনো উপকার করবে। বরং দুনিয়ার কোনো আহ্বানই সে শুনতে পায় না। আল্লাহ বলেন:
‘‘(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনি মৃতকে শুনাতে পারবেন না।”[সূরা আর-রূম ৩০:৫২]
২৫. প্রশ্ন : কবরমুখী হয়ে অথবা কবরের পাশে সালাত আদায় করার শার‘ঈ হুকুম কী?
উত্তর: কবরমুখী হয়ে অথবা কবরকে কেন্দ্র করে তার পার্শ্বে সালাত আদায় করা শির্ক এবং তা কখনোই আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ولا تصلوا إلى القبور»
“তোমরা কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে না।” (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮)
বাংলাদেশে ওলী-আওলিয়াদের কবরকে কেন্দ্র করে অনেক মসজিদে নির্মিত হয়েছে। ঐ সকল কবরকেন্দ্রীক মসজিদে সালাত আদায় করলে তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে বলেছেন: “ইয়াহূদী নাসারাদের উপর আল্লাহ অভিসম্পাত। কারণ তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। (বুখারী-৩৪৫৩, ১৩৯০; মুসলিম- ৫২৯)
রচনা: শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী ও শাইখ মুহাম্মাদ আবদুন নূর মাদানী
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া