পাশাপাশি দুটি চিত্র কল্পনা করা যাক। একটি চিত্র বহু বছর আগের। বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রায় যখন ছোট্টটি ছিলেন, তাঁর মা নাকি তখন থেকেই বিশেষভাবে যত্ন নিতেন তাঁর। আর একটি চিত্র বর্তমানের। আপনার আদরের সোনামণিকে সাত রাজার ধন মানিকের বিনিময়েও রোজ একটাবার গোসল করাতে পারছেন না আপনি কিংবা কোনোক্রমে গোসলখানায় নিয়ে যেতে পারলেও তার ছটফটানিতেই তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলা যাচ্ছে না ঠিকমতো। রাজ্যের ধুলাময়লার আবাস হচ্ছে আপনার সোনামণির ঘাড়, কনুই আর শরীরের অন্যান্য অংশে, স্থায়ী দাগ হয়ে যাচ্ছে।
পাঠক হয়তো ভাবছেন, এ আবার কেমনতর তুলনা? সবাই কি আর বিশ্বসুন্দরী হবে বা মডেলিং-অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেবে? নিশ্চয়ই নয়। তবে কিনা শিশুর পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।
সন্তানকে ছোট্ট থেকেই যত্নে রাখেন মা-বাবা। খাওয়াদাওয়া, ঘুম, খেলা—সবকিছুতেই খেয়াল পরিবারের। আর রোজকার তেলমালিশ তো দারুণ প্রচলিত এ দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ মহলে। শিশু একটু বড় হতে থাকলেই তৈরি হয় তার নিজস্ব মতামত। তখন তার যত্ন নিতে গেলেই হয়তো বায়নাক্কা। ৪ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের জন্য নকশার এই আয়োজন।
যত্নে থাকুক সোনামণি
রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন এ প্রসঙ্গে কথা বললেন মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা থেকেই। নিজের পুত্রের যত্নে সময় দেন এই মা। তিনি জানান, ‘শিশুর যত্ন তো নিতেই হবে, তবে তা যেন হয় শিশুর মনের মতো করে। যত্নের বিষয়টা মজার করে উপস্থাপন করা চাই, খেলতে খেলতেই যত্ন নেওয়া সারা। শিশুর শরীরে যা প্রয়োগ করবেন, সেটির ঘ্রাণ কিংবা ওই সময় শিশুর পছন্দের অডিও ক্লিপে আকৃষ্ট করা যায় ওকে।’ গোসলখানাও হোক ওর পছন্দমতো সাজানো। কিংবা শিশু বসে আছে, মা-বাবা মজার কথা বলতে বলতে ম্যাসাজ ক্রিম মালিশ করিয়ে এরপর গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে দিলেন। মাসে একবার এই মজার খেলাই হবে শিশুর ডিপ ক্লিনিং। এ ছাড়া এক দিন অন্তর সাবান-শ্যাম্পু যথেষ্ট, তবে ধুলাময়লা লাগলে বাইরে থেকে ফিরে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করার উপায়টা অভ্যাস বানিয়ে ফেলা ছাড়া কিন্তু উপায় নেই করোনাকালে। গোসলের পর তেল বা লোশন লাগাতে হবে ত্বক আর্দ্র রাখতে (প্রয়োজনে রাতে ঘুমের আগেও)। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বড়দের প্রসাধনসামগ্রী শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
বাড়িতেই বাড়তি কিছু
ছোট্ট থেকে যত্ন নিলে কিন্তু অভ্যাসটাও হয়ে যায় ঠিকঠাক। কথা হলো আরেক মায়ের সঙ্গে। হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী নিজের কন্যার যত্ন নিয়েছেন ছোট থেকেই, সাবান এড়িয়ে। উৎসাহ পেয়েছেন ঐশ্বরিয়া রায়ের মায়ের কথা জেনে। তিনি জানান শিশুর জন্য ঘরোয়া যত্নের উপায়।
l শুষ্কতা এড়াতে চাই নারকেল তেল তিন কাপ, কাঁচা হলুদবাটা তিন টেবিল চামচ, মেহেদিবাটা তিন টেবিল চামচ ও দূর্বাঘাসবাটা তিন টেবিল চামচ। মিশ্রণটি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে কাচের বোতলে রেখে দিন। রোজ রাতে কিংবা গোসলের পর ভেজা
ত্বকে পুরো শরীরে মালিশ
করিয়ে দিন।
l নিয়মিত মুখ ধোয়ার জন্য দুধের সঙ্গে বেসন বা ময়দা মিশিয়ে ব্যবহার করুন ফেসওয়াশের মতো। ত্বক কোমল থাকবে।
l তুলসীপাতাবাটা, পুদিনাপাতাবাটা, নিমপাতাবাটা আর কাঁচা হলুদবাটা নিন সমান পরিমাণে। মিশ্রণটি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে লাগিয়ে দিন ত্বকে (সপ্তাহে বা ১৫ দিনে একবার)। শুকিয়ে গেলে লেবুর রস দিয়ে (নইলে শরীরে মাখার সময় প্যাকে সামান্য লেবুর রস যোগ করে নিন) ছোট তোয়ালে বা কাপড়ের সাহায্যে উঠিয়ে ফেলুন। এরপর গোসল করিয়ে দিন সাবান ছাড়া।
l গরম দুধ এক কাপ, কাঁচা হলুদবাটা দুই চা-চামচ আর প্রয়োজনমতো ময়দা মিশিয়ে পুরো শরীরে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর গোসল করিয়ে দিন সাবান ছাড়া, সপ্তাহে অন্তত এক দিন (এটি মেয়েশিশুদের জন্য বিশেষ করে ভালো)।
ত্বকের সমস্যায়
আফরিন মৌসুমী জানান ত্বকের কিছু সমস্যার ঘরোয়া সমাধান—
l ত্বক খুব শুষ্ক আর খসখসে হয়ে গেলে শিশুর ত্বকে চুলকানি হতে পারে। খুব শুষ্ক ত্বকের জন্য নিন নারকেল তেল আর জলপাই তেল নিন দুই কাপ। খাঁটি তিলের তেল নিন এক কাপ। একসঙ্গে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে বোতলে রেখে দিন। গোসলের পর ভেজা ত্বকে এবং রাতে ঘুমের আগে মালিশ করে দিন এই তেল।
l ফুসকুড়ি, দানা, ব্ল্যাকহেডস হলে এক চা–চামচ বেসন, আধা চা–চামচ নিমপাতাবাটা ও আধা চা–চামচ হলুদবাটা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। কুসুম গরম পানিতে তুলা ভিজিয়ে মুখ মুছে নিয়ে মালিশ করে দিন পুরো মুখে (সপ্তাহে এক দিন)। পাঁচ মিনিট পর আবার কুসুম গরম পানিতে তুলা ভিজিয়ে মুখ মুছে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুতে পারেন।