প্রশ্ন: আমার বয়স ২১ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। ওজন ৭২ কেজি। পেটে খানিকটা মেদ আছে। এই মেদ কিছুতেই কমছে না। ৬ মাস ধরে রোজ বাসায় ৩০ মিনিট ব্যায়াম করি। ওয়ার্মআপসহ সিক্স প্যাক অ্যাবসের ব্যায়ামগুলো করছি। সকালে ১টি ডিম, একমুঠো পাঁচমিশালি বাদাম (মিক্সড নাটস), কয়েকটি খেজুর এবং একটি ফল খাই। দুপুরে ও রাতে ১ প্লেট ভাত এবং রাতে সর ছাড়া এক গ্লাস দুধ খাচ্ছি। পানি প্রচুর পান করছি, প্রায় দেড় লিটার। অন্য সময় খিদে পেলে ফল বা বাদাম খাই। অল্প চিনি দিয়ে কফি বা চা দিনে ১–২ বার, কিন্তু পেটের মেদ কমছে না। বাকি শরীরে কোথাও বাড়তি মেদ নেই। আমার কি ডায়েট করা উচিত? কী কী ব্যায়াম আমার জন্য সহায়ক হবে?
উত্তর: আপনার পেটের মেদ কমানোর জন্য প্রথমেই দরকার ইতিবাচক মনোভাব। আপনার স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে। খেতে হবে শরীরের চাহিদা (শক্তি) অনুযায়ী। প্রতিদিনের বাড়তি ক্যালরি ব্যায়ামের মাধ্যমে খরচ করতে হবে। মনে রাখবেন, শরীরের যেকোনো জায়গার, বিশেষ করে পেটের ওজন বা ভুঁড়ি কমানোর জন্য আলাদা কোনো জাদু নেই। এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়। যতক্ষণ না আপনি আগ্রহী হবেন, ততক্ষণ আপনার ওজন কমবে না। এ জন্য একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ আপনার জন্য খুব জরুরি।
তারপরও কিছু সাধারণ বিষয়, যা শরীরের ও পেটের মেদ কমাতে আপনাদের সাহায্য করবে, তা বলছি—উচ্চ মানের আমিষ (চর্বি ছাড়া) খেতে হবে, যা আমাদের পিওয়াইওয়াই (পেপটাইড ওয়াইওয়াই) হরমোন নিঃসরণ করে খাওয়ার ইচ্ছা কমাতে এবং বিপাকক্রিয়ার কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। আঁশসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে, যাতে ক্যালরি কম গ্রহণ করে পেট ভরিয়ে রাখে। ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ বা খাবার বেশি খেতে হবে। ফলের রস না খেয়ে, কম ক্যালরিযুক্ত গোটা ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন, যাতে আঁশসহ পুষ্টি আসে।
মূল খাবার খাওয়ার পর প্রোবায়োটিক (টক দই) খেলে পাকস্থলী সুস্থ থাকে এবং পেটের মেদ কমাতেও সহায়ক হয়। বাদ দিতে হবে—মিষ্টিজাতীয় খাবার, রিফাইন শর্করা, পানীয়, প্রসেসড খাবার, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, চর্বিযুক্ত খাবার, ট্রান্স ফ্যাট ইত্যাদি। খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন। তবে পানি পান করতে হবে খাওয়ার ২০-২৫ মিনিট পর। রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে (রাতে ৫ ঘণ্টার কম ঘুমালে তাদের ওজন ও ভুঁড়ি বাড়াতে থাকে)। দুশ্চিন্তা কমাতে হবে (স্ট্রেস কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে আমাদের ক্ষুধা বাড়ায়, যা পেটে মেদ জমার হার বাড়ায়)। যাঁরা ওজন কমিয়েছেন, তাঁদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে হবে; কারণ, ওজন কমানোর থেকে ধরে রাখা আরও কঠিন, কিন্তু জরুরি। প্রতিদিন ব্যায়াম, বিশেষ করে পেটের ব্যায়াম করলে ধীরে ধীরে আপনার পেটের মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব।