Categories
News

ইসলামিক বক্তা তাহেরীর গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি ‘অবশেষে ফেঁসে গেলেন তাহেরি, শীর্ষক ক্যাপশনে ইসলামিক বক্তা তাহেরী গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

screenshot: Facebook

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন; এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

যা দাবি করা হচ্ছে

প্রচারিত ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, ধর্মীয় বক্তা শরীফুল ইসলামের জিহ্বা কাটার অপরাধে সম্প্রতি চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত চারজন আসামি রিমান্ডে উক্ত ঘটনার মূল হোতা হিসেবে তাহেরীর কথা বলেছেন। তবে ভিডিও’র শেষে বলা হয়, নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে কিছু বলা যাচ্ছে না।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামিক বক্তা তাহেরীর গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং ২০২২ সালে ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকে কিছু অংশ কেটে নতুন ভয়েস সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে তাহেরি গ্রেফতার হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

আলোচিত ভিডিওর কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল ST TV 24 নামের ইউটিউব চ্যানেলে ‘Allama Taheri at Hotel Nurjahan, the rest is history. Mufti gias uddin taheri’ শিরোনামে আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: YouTube 

উক্ত ভিডিওর সাথে সম্প্রতি তাহেরী গ্রেফতার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর বেশ কিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি কুমিলার নূরজাহান নামের একটি হোটেল থেকে ধারণকৃত। যেখানে তাহেরীকে হোটেলে প্রবেশ করে পুলিশ এবং তার সফরসঙ্গীদের সাথে খাবার খেতে দেখা যায়।

Image Collage by Rumor Scanner

তাহেরির গ্রেফতার হওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেখানে মূল ভিডিওটির কিছু অংশ রোটেট(ঘুরিয়ে) করে সম্পাদনা করা করা হয়েছে। যার ফলে ভিডিওটিতে ব্যবহৃত লোগো এবং সাবটাইটেল উল্টোভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে।

এছাড়াও গিয়াসউদ্দিন তাহেরীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ‘পুলিশের সাথে ভাইরাল ভিডিও নিয়ে কী বললেন আল্লামা তাহেরী হুজুর’ শীর্ষক শিরোনামে আপলোডকৃত একটি ভিডিওতে তাহেরী নিজেই গ্রেফতারের বিষয়ে বলেন, সারাদেশে গুজব উঠেছে তিনি জেলে আছেন। এক মাহফিল থেকে ফেরার পথে তাকে এগিয়ে দেওয়ার সময় পুলিশ কুমিল্লার নূরজাহান হোটেলে তাকে নিয়ে নাস্তা করেন। সেই পুরোনো ভিডিওকে তার গ্রেফতারের ভিডিও বলে প্রচার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

screenshot: Facebook

এর আগে গত ০৮ মার্চ অনলাইন গণমাধ্যম নিউজবাংলা২৪ এর ওয়েবসাইটে ‘ইসলামি বক্তার জিহ্বা কাটার ঘটনায় গ্রেফতার ৫’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে গ্রেফতারকৃতদের সাথে তাহেরীর কোন সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

screenshot: NewsBangla24.com

পাশাপাশি, ধর্মীয় বক্তা শফিকুল ইসলামের জিহ্বা কেটে নেওয়ার ঘটনায় মাওলানা তাহেরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন দাবিতে গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিংবা তাহেরী উক্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত বলে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছেন বলেও কোন তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, উপরোক্ত ভিডিও যাচাই, তাহেরীর নিজের বক্তব্য এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে, প্রচারিত ভিডিওর সাথে তাহেরীর গ্রেফতার হওয়া সম্পর্কিত দাবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং তাহেরীকে পুলিশ গ্রেফতারও করেনি।

মূলত, সম্প্রতি ধর্মীয় বক্তা শফিকুল ইসলামের জিহ্বা কেটে নেওয়ার ঘটনায় তাহেরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, তাহেরী গ্রেফতার হননি এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রায় ১১ মাস আগে ইউটিউবে আপলোডকৃত একটি ভিডিওর থেকে কিছু অংশ কেটে নতুন ভয়েস সংযুক্ত করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে এবং গণমাধ্যম বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে উক্ত ঘটনার সাথে তাহেরীর সম্পৃক্ততার খবর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ০৪ মার্চ রাতে মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মাওলানা শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া নামের এক ইসলামি বক্তার ওপর হামলা চালিয়ে ছুরি দিয়ে তার জিহ্বা কেটে নেয় দুর্বৃত্তরা।

সুতরাং, ইসলামিক বক্তার জিহ্বা কেটে নেওয়ার ঘটনায় মাওলানা তাহেরীর গ্রেফতার হওয়ার  দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র