খুলনার লবণাক্ত জমিতে পরিক্ষামূলকভাবে বার্লি বা যব চাষে সফলতা পেয়েছেন কৃষক হাবিবুর রহমান। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ জমিই লবণাক্ত। ফলে এই মাটিতে সব ধরনের সবজি বা ফসলের চাষাবাদ সহজ নয়। শুধু আমন ধান চাষ করা যায়। তবে নতুন শস্য ফসল হিসেবে বার্লি চাষ সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে।
জানা যায়, কৃষক হাবিবুর রহমান খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি বিলে তার ১৬ শতাংশ জমিতে বার্লি বা যব চাষ করেছেন। বিলের জমিগুলো লবণাক্ত হওয়ায় ও সেখানে পানির সমস্যার কারণে আমন ধান ছাড়া অন্য কিছু করা সম্ভব হয় না। তবে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে বার্লি চাষে সফলতা এসেছে। কৃষক হাবিবুরের বার্লি চাষ ও তাতে সফল হতে দেখে অনেক কৃষক এই ফসল চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, চলতি বছর আমি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরামর্শে আমার ১৬ শতক জমিতে বার্লি চাষ করেছি। এ অঞ্চলে আমিই প্রথম যে এই ফসল চাষ করছি। গবেষণা বিভাগ আমাকে বিনামূল্যে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রথমে ভেবেছিলাম ফলন আসবে না। তবে এখন জমিতে ফলন দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে বার্লির চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন না থাকায় বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। আমার চাষ করা দেখে অনেক কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। তারা আমাকে বীজ সংগ্রহ করে রাখতে বলেছেন।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা উপকূলের জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রচলিত কৃষি থেকে কৃষকদের বের করে আনার চেষ্টা করছি। অনুর্বর জমিতে বিকল্প ফসল হিসেবে বার্লি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। কেননা অনুর্বর জমিতে স্বল্প খরচে এ ফসল চাষ করা যায়। গাছে পোকামাকড়ের আক্রমন কম হয়, সেচ না দিলেও ফলন পাওয়া যায়। লবনাক্ত জমি হওয়ায় অন্যান্য ফসল চাষ করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর এই ফসলটি লবণাক্ততা সহনশীল।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, আমরা ২০১৯ সালে কয়রা উপজেলায় বার্লি চাষের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা শুরু করি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বীজ এনে প্রায় ৬ বছর যাবত গবেষণা চালানো হয়েছে। এর চাষের সম্ভাবনা ও নতুন জাত উদ্ভাবনের খুব কাছাকাছি রয়েছি। পাশাপাশি কৃষক হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে চাষ করে সফলতা পেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে বার্লির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই তুলনায় উৎপাদন হয় না। তাই আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এটির আটা দিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন রুটি, শিশুখাদ্য, স্যুপ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এমনকি রোগীর পথ্য হিসেবেও বার্লি খাওয়া হয়ে থাকে। আমরা এর উৎপাদন বাড়ানো চেষ্টা করছি।