দীর্ঘদিন ধরে ‘গুয়ামের আইন অনুযায়ী, কেউ কোনো ভা*র্জিন মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ের আগে সেই মেয়েকে অবশ্যই কোনো বিদেশীর সাথে ভা*র্জিনিটি নষ্ট করতে হবে। ভা*র্জিনিটি নষ্ট করার পরই সেই মেয়ে বিয়ের জন্য উপযুক্ত হবে। যে পুরুষ এটি করবে তাকে পারিশ্রমিকও দেওয়া হয়।‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
তবে উল্লেখিত পোস্টগুলোতে ‘কিছু সাইট এটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে’ এমন একটি ডিসক্লেইমার উল্লেখ করে প্রচার করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম ও ব্লগে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন বিডি২৪লাইভ, বিডি২৪রিপোর্ট, সামহোয়্যারইনব্লগ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গুয়ামে কোনো পুরুষ ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং অঞ্চলটিতে এমন কোনো আইনের অস্তিত্ব নেই।
গুয়াম কোথায়?
গুয়াম উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি দ্বীপ ও অসংগঠিত অঞ্চল। এটি মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম, সর্বাধিক জনবহুল এবং দক্ষিণে অবস্থিত একটি এলাকা। গুয়াম যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো থেকে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ মাইল পশ্চিমে এবং ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার পূর্বে ১ হাজার ৬০০ মাইল দূরে অবস্থিত।
গুয়ামের বিয়ের আইনে কি আছে?
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে James Jheaney নামের একটি ব্লগ সাইটে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ‘No, It Is Not Illegal To Marry A Virgin In Guam‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ব্লগ খুঁজে পাওয়া যায়।
ব্লগটি সূত্রে গুয়ামের বিয়ে সম্পর্কিত আইন খুঁজে পাওয়া যায়।
আইনটির ৩১০২ ধারায় বিয়ে সম্পর্কে বলা হয়েছে,
‘Any unmarried person of the age of eighteen (18) years or older, and
not otherwise disqualified, is capable of consenting to and consummating marriage; provided, that any person under the age of eighteen (18) years and over the age of sixteen (16) years, with the consent in writing of the parents of the person under age, or one of such parents, or of his or her guardian, where such written consent is filed with the Director of Administration, as provided in § 3202 of this Title, is capable of consenting to and consummating marriage.’
অর্থাৎ ‘আঠারো (১৮) বছর বা তার বেশি বয়সের যে কোনো অবিবাহিত ব্যক্তি এবং অন্য কোনোভাবে অযোগ্য নয়, এমন ব্যক্তি বিবাহে সম্মতি দিতে এবং বিয়ে করতে পারবে; তবে শর্ত থাকে যে, আঠারো (১৮) বছরের কম বয়সী এবং ষোল (১৬) বছরের বেশি বয়সী যে কোনো ব্যক্তি অভিভাবকদের লিখিত মত নিয়ে বিবাহে সম্মতি দিতে এবং বিয়ে করতে পারবে।
আইনটির ৩১০৪ নাম্বার ধারায় বিয়ের অযোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে
‘Marriages between parents and children, ancestors and descendants of every degree, and between brothers and sisters of the half as well as the whole blood, and between uncles and nieces or aunts and nephews, are incestuous, and void from the beginning whether the relationship is legitimate or illegitimate.’
অর্থাৎ পিতামাতা এবং সন্তানদের মধ্যে বিবাহ, রক্ত সম্পর্কীয় ভাই বোনদের মধ্যে বিবাহ, চাচা এবং ভাতিজি বা খালা এবং ভাগ্নের মধ্যে বিবাহ পুরোপুরি অবৈধ।
এছাড়া আইনটির অন্যান্য ধারাগুলো খুঁজেও কোথাও ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে বিয়ে নিষিদ্ধ সম্পর্কিত কোনো ধারা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ গুয়ামের বিয়ে সম্পর্কিত আইনে কোনো পুরুষ কোনো ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না এমন কোনো ধারা নেই।
গুয়ামের বিয়ে সম্পর্কিত রীতিনীতি
গুয়ামে বিয়ে সম্পর্কিত সংস্কৃতি অনুসন্ধানে দেখা যায়, অঞ্চলটিতে বিয়ে সম্পর্কিত রীতিনীতিগুলো চার ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপটি হচ্ছে First Visit to the Prospective Bride’s Home। এই ধাপে পাত্র-পাত্রী নিজ নিজ বিয়ে সম্পর্কে তাদের অভিভাবকদের অবগত করে। এক্ষেত্রে পাত্রীর বাড়িতে পাত্রের বাবা-মার আসার ব্যাপারে পাত্রীর বাবা-মার সম্মতি প্রয়োজন পড়ে। যদি তারা সম্মতি না দেয় তাহলে বিয়ের ব্যাপারটি আর সামনে আগায় না। যখন এই পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন ছেলেটি মেয়েটিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে এবং নিকটাত্মীয়ের কাছে বা তার বাড়িতে থাকতে প্রলুব্ধ করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে গ্রামের পুরোহিত একটি সাধারণ বিবাহ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকেন।
বিয়ের পরের ধাপটি হলো ‘The Groom’s Party’। এটির আয়োজন করে পাত্রপক্ষ, যাকে ফ্যান্ডাংগো বলা হয়। ফ্যান্ডাংগো হল সমস্ত উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদযাপন। এর আয়োজন করা হয় সন্ধ্যায়। যেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকে নববধূ এবং তার বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা। এই অনুষ্ঠানে সবকিছু কনে এবং তার পরিবারকে সন্তুষ্ট এবং আরামদায়ক বোধ করার দিকে মনোনিবেশ করে আয়োজন করা হয়।
গুয়ামে বিয়ের তৃতীয় ধাপটি হলো The Appreciation Journey to the Bride’s Home। এই আয়োজনটি করা হয় বর কর্তৃক কনে এবং তার পরিবারকে ফ্যান্ডাংগোতে উপস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞতার প্রদর্শনী হিসেবে। এখানে বর কনের জন্য গহনা সহ অন্যান্য উপঢৌকন সামগ্রী নিয়ে তার বাড়িতে যায়।
গুয়ামে বিয়ের সবশেষ ধাপটি হচ্ছে ‘The Bride’s Breakfast’। এটি বিয়ের মূল অনুষ্ঠানের পরে এটি কনের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে উভয়পক্ষেরই অতিথি তালিকা ছোট থাকে এবং সেখানে গান বা নাচ হয় না।
তবে বর্তমানে অঞ্চলটিতে বেশিরভাগ বিয়েই ঐতিহ্যগত প্রথা মেনে চলে না। সেখানে এই প্রথাগুলো বিরল হয়ে উঠেছে এবং এসবের পরিবর্তে সাধারণত হোটেল বা অন্য পাবলিক ভেন্যুতে ব্রাইডাল শাওয়ার সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। অনেক ক্ষেত্রে, বর এবং কনে, তাদের নিজ নিজ পিতামাতার সাথে পরামর্শ করে, বিয়ের পরিকল্পনা তৈরি করে এবং বাস্তবায়ন করে। মোদ্দা কথা, অঞ্চলটির বিয়ের প্রথা এখন অনেকটাই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ করে চলে।
অর্থাৎ, গুয়ামের যে বিয়ের প্রথা তার সঙ্গেও গুয়ামে কোনো ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না দাবিতে প্রচারিত তথ্যটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গুয়ামে ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না দাবিতে গুগল অনুসন্ধানে যা আসে
এই সম্পর্কিত তথ্য যাচাইয়ে গুগলে অনুসন্ধান করলে প্রথমেই ভারতের উড়িষ্যা রাজ্য থেকে পরিচালিত Orissa Post নামের একটি অনলাইন পোর্টালে তিন বছর পূর্বে ‘Here girls must have physical relations with another man before getting married’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গুয়ামে কোনো পুরুষ কোনো কুমারী মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ের পূর্বে নারীদের কোনো বিদেশী পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে হয় এবং এজন্য পুরুষটিকে তাদের অর্থও দিতে হয়।
এমন কি এই অঞ্চলের কিছু লোকের পেশাই হলো এমন মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করা, যাদের খুব শীঘ্রই বিয়ে হতে চলেছে। কিছু মিডিয়া রিপোর্ট এমনটি দাবি করে যে, বিয়ের সময় কোনো মেয়েকে কুমারী পাওয়া গেলে তা আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।
কিন্তু প্রতিবেদনটিতে উক্ত তথ্যসমূহের কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এই সম্পর্কিত অন্যান্য যেসব প্রতিবেদন পাওয়া যায় তাতেও কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এমন আরও কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
পাশাপাশি কিছু কিছু প্রতিবেদনে এটিকে গুয়ামের আইন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও গুয়ামের বিয়ে সম্পর্কিত আইনে এমন কোনো ধারা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গুয়াম উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি দ্বীপ ও অসংগঠিত অঞ্চল। এই অঞ্চলের বিয়ে সম্পর্কিত একটি আইনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য প্রচার করা হচ্ছে যে, ‘গুয়ামে কোনো পুরুষ ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ের আগে সেই মেয়েকে অবশ্যই কোনো বিদেশীর সাথে ভার্জিনিটি নষ্ট করতে হবে। ভার্জিনিটি নষ্ট করার পরই সেই মেয়ে বিয়ের জন্য উপযুক্ত হবে। যে পুরুষ এটি করবে তাকে পারিশ্রমিকও দেওয়া হয়।’ তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে গুয়ামের বিয়ে সম্পর্কিত আইনে ও অঞ্চলটিতে প্রচলিত বিয়ের প্রথায় এমন কোনো বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রাপ্ত বয়স্ক হলে এবং বিয়ের সামর্থ্য থাকলে অঞ্চলটিতে বিয়ের ক্ষেত্রে ভার্জিন বা কুমারী সম্পর্কিত কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সম্মতি নিতে হবে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ামে কোনো পুরুষ ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।