“অন্য দেশের হাতি নিয়া কতো লেখা লেখি দেখেছি। এবারে আমার নিজের দেশের চিড়িয়াখানা নিয়ে একটু লিখুন। খাবারের অভাবে আজ তাদের কি অবস্থা, যাদের সম্ভব হয় তারা ওদের একটু খাবারের ব্যাবস্থা করে আসবেন। চিত্রঃ জাতীয় চিড়িয়াখানা, মিরপুর।” শীর্ষক শিরোনামের কয়েকটি রুগ্ন সিংহের ছবিকে মিরপুর চিড়িয়াখানার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত সিংহের ছবিগুলো বাংলাদেশের মিরপুর চিড়িয়াখানার ছবি নয় বরং ছবিগুলো সুদানের একটি পার্কের অভুক্ত কয়েকটি সিংহের ছবি।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, সুদান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী Osman Salih এর ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টে ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে ব্যবহৃত ছবিগুলোর সাথে ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানার রুগ্ন বাঘের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ফেসবুক স্বয়ংক্রিয় অনুবাদের মাধ্যমে উক্ত পোস্ট হতে জানা যায়, সুদানের খারতুম ৩ এর আল-কারশি পার্কে অভুক্ত ও রুগ্ন অবস্থায় সিংহগুলো তিনি দেখতে পান। এ ব্যাপারে পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, একমাস ধরে পার্কটির আয় একটি সিংহকে এক সপ্তাহ খাওয়ানোর মতোও পর্যাপ্ত হচ্ছে না। উক্ত পোস্টে সিংহগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান করেন তিনি।
এছাড়াও উক্ত পোস্টের সাথে একটি আপডেট যুক্ত করে তিনি জানান, বন্যপ্রানী পুলিশ সিংহগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে এবং চিকিৎসা ও খাবার নিশ্চিত করেছে।
যা থেকে জানা যায়, উক্ত সিংহগুলো সুদানের একটি চিড়িয়াখানার।
পরবর্তীতে, Osman Salih এর উক্ত পোস্টের সূত্র ধরে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম The Washington Post এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি “Lions are starving to death in a Sudan park. A worldwide campaign is underway to save them” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খাদ্যের অভাবে অপুষ্টিতে ভোগা সিংহগুলো সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি চিড়িয়াখানার।
এছাড়াও, আফ্রিকা ভিত্তিক গণমাধ্যম Africa News এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি “How social media outrage saved bony, starving lions in Sudan zoo” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকেও সিংহগুলো সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি চিড়িয়াখানার সিংহ বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
উক্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইনসাইডার, যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল, মধ্যপ্রাচ্যের গালফ টুডে সংবাদ প্রচার করে।
মূলত, উক্ত ছবিগুলো সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি চিড়িয়াখানার অভুক্ত ও রুগ্ন সিংহের ছবি। সুদানের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী ওসমান সালিহ উক্ত সিংহগুলোর অবস্থা তুলে ধরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজস্ব ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করেন। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। তবে উক্ত সিংহের ছবিগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশের মিরপুর চিড়িয়াখানার সিংহের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি চিড়িয়াখানার রুগ্ন সিংহের ছবিকে বাংলাদেশের মিরপুর চিড়িয়াখানার সিংহের ছবি দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে; যা মিথ্যা।