সম্প্রতি “নেপালের বিমান দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে বিমান সেবিকার টিকটক ভিডিও” শীর্ষক শিরোনামসহ বিভিন্ন শিরোনামে একটি তথ্য দেশীয় পোর্টাল এবং ভারতীয় মূলধারার অনেক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
আলোচিত তথ্যটি উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া, টাইমস নাউ, ইন্ডিয়াটিভি, ইন্ডিয়াটাইমস, ইন্ডিয়া ডট কম, রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, উইওন (ওয়ার্ল্ড ইন ওয়ান নিউজ), নিউজ১৮ (শিরোনাম বিভ্রান্তি), এবিপি লাইভ, ডিএনএ ইন্ডিয়া (ইউটিউব), মানি কন্ট্রোল (ইউটিউব), ভারত ভিত্তিক পোর্টাল ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস, ভারত টাইমস, মর্নিং এক্সপ্রেস, পিপানিউজ, ক্যাচনিউজ, লাইভ হিন্দুস্তান, আনন্দবাজার, জি-নিউজ (বাংলা), দ্য ওয়াল, উত্তরবঙ্গ সংবাদ, সাভি কন্নড় নিউজ, ইনস্ক্রিপ্ট (ব্লগ)।
এছাড়াও, এই তথ্যটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশী পোর্টাল এমটিনিউজ২৪।
যদিও ইন্ডিয়া টুডে ভুল শুধরে নিয়ে তাদের প্রতিবেদন আপডেট করেছে।
নতুন করে সত্য তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ (পুর্বের ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন না সরিয়ে)
ইন্ডিয়া ডট কম-এ প্রথমে টিকটকের পুরোনো ভিডিওটিকে “দুর্ঘটনার ঠিক আগে ধারণ করা” উল্লেখ করে প্রতিবেদন করলেও পরবর্তীতে তারা “ইয়েতি এয়ারলাইন এয়ার হোস্টেসের ভাইরাল টিকটক ভিডিওটি মারাত্মক নেপাল বিমান দুর্ঘটনার কিছু মুহূর্ত আগের নয় (অনুবাদিত)” শিরোনামে সত্যতা জানিয়ে পুনরায় প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এছাড়াও, ডিএনএ ইন্ডিয়া-ও প্রথমে টিকটকের পুরোনো ভিডিওটিকে “দুর্ঘটনার ঠিক আগে ধারণ করা” উল্লেখ করে প্রতিবেদন করলেও পরবর্তীতে তারা “ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এয়ার হোস্টেসের ভাইরাল টিকটক ভিডিওটি দুর্ঘটনার দিনে শুট করা হয়নি (অনুবাদিত)” শিরোনামে সত্যতা জানিয়ে পুনরায় প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিমান সেবিকার টিকটক ভিডিওটি দুর্ঘটনার কিছু পূর্বে ধারণ করা হয়নি বরং ভিডিওটি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে টিকটকে প্রকাশ করা হয়েছিল।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ক্ষুদে ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটকে অশিন আলে মাগার এর নিজের একাউন্টে ২০২২ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর #goviral #cabincrew #work #viral হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ভিডিওটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের।
পাশাপাশি, ভারতীয় গণমাধ্যম “এনডিটিভি”-তে “নেপাল ফ্লাইট এয়ার হোস্টেসের ভাইরাল ভিডিও পুরানো, ‘বিধ্বস্তের কয়েক মিনিট আগে’ নয় (অনুবাদিত)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টিকটক-এ আপলোড করা তার আসল ভিডিও দেখায় যে এটি প্রথম এয়ার হোস্টেস (তিনি) গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর শেয়ার করেছিলেন, দুর্ঘটনার দিনে নয়।
মূলত, গত ১৫ জানুয়ারি ৭২ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে নেপালের একটি বিমান পোখারা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর গণমাধ্যমে বিমান সেবিকা “অশিন আলে মাগার” এর একটি টিকটক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে “দুর্ঘটনার কিছু আগে ধারণ করা ভিডিও” দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ভারতীয় মূলধারার বেশকিছু গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন পোর্টালে একই দাবি উল্লেখ করে প্রতিবেদন প[রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, “অশিন আলে মাগার” এই দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দুই বছর ধরে ইয়েতি এয়ারলাইন্সে কাজ করছিলেন ও কাঠমান্ডুতে বসবাস করছিলেন। তিনি তার চার ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন এবং তিনি দুই বছর আগে পোখারায় বিয়ে করেন এবং তার স্বামী যুক্তরাজ্যে থাকেন।
এছাড়াও, ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়াল “অশিন আলে মাগার” এর মত দেখতে (ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ দৃশ্যে) রাশিয়ান একটি ভিডিওর স্থিরচিত্র প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশ করে।
তবে স্থিরচিত্রটিকে পুরোনো এবং রাশিয়ান (ভিডিওর) স্থিরচিত্র বলছে ওড়িশ্যা ভাস্কর।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ভুল তথ্য, ছবি নিয়ে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদন (দেশি গণমাধ্যমসহ) প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, নেপালের সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পুরোনো টিকটক ভিডিওকে “নেপালের বিমান দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে বিমান সেবিকার টিকটক ভিডিও” হিসেবে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।