পান চাষে স্বাবলম্বী গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের কৃষকরা। শুরুতে এই গ্রামে মাত্র ছয়টি পরিবার বসবাস করতো তাই গ্রামের নাম ছয়ঘরিয়া। বর্তমানে এই গ্রামে প্রায় ১ হাজার পরিবারের বসবাস। তারমধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশত পরিবার পান চাষের সাথে জড়িত। কম খরচে পান চাষ করে তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
জানা যায়, এই গ্রামের পান চাষিরা প্রায় প্রায় অর্ধশতাধিক বছর ধরে পানচাষ করে আসছেন। পরিবারগুলোর উপার্জনের প্রধান উৎস হলো এই পান চাষ। মাঝে কয়েক বছর পানির কারণে পান চাষ করা না গেলেও ২০০৩ সালের দিকে তালতলী ও বিক্রমপুরী এ দুই জাতের পান দিয়ে আবারও চাষ শুরু। পানের বরজে গাছগুলো বহুবর্ষজীবি হওয়ায় বারবার গাছ লাগানো খরচ নেই। ফলে একবার গাছ লাগালে তার থেকে তার অনেক বছর টিকে। যা কৃষকদের সারাবছর পান পাতা তুলে বিক্রি করে আয়ের পথ সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে ছয়ঘরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির চারপাশে শুধু পানের বরজ। কৃষকরা ও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে পানের বরজের পরিচর্যায়, আবার কেউ পান সংগ্রহ করে বাজারজাত করণে ব্যস্ত আছেন।
পানচাষি লাল মিয়া বলেন, আমার দাদার সময় থেকে আমরা পান চাষ করে আসছি। আমি ৫ কাঠা জমিতে পানের চাষ করছি। মাটি, বাঁশ, কাশিয়াসহ ছাউনির উপকরণ ও তার সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এখন আগের মতো কাজের লোকও পাওয়া যায় না। তাই পান চাষ কমিয়ে দিয়েছি।
একই গ্রামের মমিনা বেওয়া বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি এই পান বিক্রি করেই সংসার চালিয়েছি। বসতবাড়িসহ মোট জমি ৪০ শতাংশ। এরমধ্যে ১৭ শতাংশে পান লাগিয়েছি। সপ্তাহে এক গাদি করে পান তোলা যায়। বিক্রি হয় ৪-৫ হাজার টাকা। তবে বর্ষাকালে আরও বেশি পান তোলা যায়। পান বিক্রির অর্থ দিয়েই সব চলছে।
আরেক পানচাষি আমজাদ হোসেন বলেন, বরজ থেকে সারাবছর পান তোলা গেলেও শীতকালে পানের পাতা কম আসে। আর পান পাতা বাড়েও কম। তবে সারাবছরের তুলনায় শীতকালে পানের দাম বেশি থাকে।
অন্যান্য চাষিরা জানান, পানের আবাদ উঁচু জমিতে করতে হয়। জমি তৈরির পর চারদিকে বেড়া ও ওপরে ছাউনি দিতে হয়। তারপরে পানের ডাল (পর) রোপণ করতে হয়। পানগাছ ওপরে বেয়ে উঠতে মাসখানেক পর শলা দিতে হবে। ৫০-৬০ দিনের মধ্যে পান বিক্রি করা যায়। পরিচর্যা ভালো হলে বরজটি একটানা ৮-১০ বছর রাখা যায়। খরচ যা হওয়ার তা শুরুতে হয়। পরে আর তেমন কোনো খরচ লাগে না। সে কারণে পানচাষ বেশ লাভজনক। তবে আমরা কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতা পাইনা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে পানের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেত।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাশিদুল কবির বলেন, অন্যান্য ফসল আবাদের তুলনায় পানচাষ লাভজনক। তাই দিন দিন এই উপজেলায় পান চাষ বাড়ছে। এই উপজেলার উৎপাদিত পান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এ পান এখন রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।