চিনি দিয়ে তৈরি খাবার পছন্দ করেন না , এমন মানুষ খুব কমই আছেন । আর বাংলাদেশে তো উৎসবে-পার্বণে বিভিন্ন রকম মিষ্টি তথা চিনি দিয়ে তৈরি খাবারের কোন বিকল্প নেই । কিন্তু চিনি বেশি খেলে তার প্রভাব কি কি হতে পারে , সেকথা জানার পর হয়তো আপনার চিনির প্রতি আগ্রহটা একেবারেই তলানিতে এসে যাবে ।
মুটিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ যে চিনি, এ কথা কম বেশি সবারই জানা , কিন্তু সেটা ছাড়াও চিনি থেকে আরো কি কি ক্ষতি হতে পারে , আসুন জেনে নেওয়া যাক।
চিনি আর ডায়াবেটিস যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ । দৈনন্দিন জীবনে চিনি খাওয়ার মাত্রা বাড়তে থাকলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ চিনি শরীরে প্রবেশ করে নিমেষে সুগার লেভেলকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। এমনটা প্রতিদিন চলতে থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর একবার যদি ডায়াবেটিস শরীরে বাসা বাঁধে তাহলে একে একে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গই অকেজো হতে শুরু করে। তাই চিনি খাওয়ায় সচেতন হোন।
চিনি শরীরে প্রবেশ করে ফ্রুকটোজে রূপান্তরিত হয়ে যায়, যা লিভারে মেদ জমাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তেও ফ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে করে একটা সময়ে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। লিভারের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই অতি মাত্রায় চিনি মেশানো পানীয় খাওয়া চলবে না। সেই সঙ্গে চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমাতে হবে অবশ্যই ।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে মাত্রাতিরিক্তি চিনি খাওয়ার কারণে কেউ যদি একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে হার্টের কর্মক্ষমতা তো কমেই, সেই সাথে স্ট্রোক এবং হার্ট ফেইলিওরের সম্ভাবনাও প্রায় ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গেলে হৃদপিন্ডের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। এতে নানাবিধ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। তাই ভুলেও বেশি চিনি খাবেন না।
এছাড়াও বেশি মাত্রায় চিনি খেলে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। আসলে দেহের ভেতরে চিনির মাত্রা বাড়তে থাকলে ইনসুলিনের উৎপাদনও বেড়ে যায়, ফলে ধমনিতে এক ধরনের দেয়াল তৈরি হতে শুরু করে। এই কারণেই রক্তচাপ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে স্ট্রোকের মতো ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। আবার, চিনি খাওয়ার মাত্রা বাড়তে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই দেহের ওজন বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও বিপদ সীমা ছাড়িয়ে যায়। উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমতে শুরু করে। ফলে হার্টের উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। এছাড়া রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়তে থাকলে মস্তিষ্কে ডোপামাইন নামক ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ ঘিরে ধরে। এতে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শরীরে শক্তি পাওয়ার জন্য কিছুটা চিনির যেমন প্রয়োজন আছে তেমনি আবার অতিরিক্ত চিনি খাওয়ায় ঝুঁকি ও আছে অনেক । সুতরাং যুক্তির বিচারে চিনি কম খাওয়াই শ্রেয় ।