Categories
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

কোভিড-১৯ আতংক নয় , সতর্ক থাকুন ।


কোভিড-১৯ আতংক নয় , সতর্ক থাকুন ।

পরিস্থিতিটা খুব খারাপ যাচ্ছে এখন, আমরা সবাই জানি। এক মহামারী এসে সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে । তবু কয়েকটা কথা মনে রাখলে এই কোভিড১৯ পরিস্থিতিতে আপনি সহজেই ভালো থাকতে পারবেন , অপরকেও ভালো রাখতে পারবেন ।

  1. কোভিড রোগীর গায়ে হাত দিলেই কোভিড ছড়ায় না। এটি এক প্রকার ড্রপলেট ইনফেকশান । একমাত্র তার হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময়েই লালার সূক্ষ্ম কণিকার মাধ্যমে ভাইরাস তার শরীর থেকে বেরোতে পারে। এবং তাও আপনার গায়ে লাগলে, পিঠে লাগলে, এমনকি তা খাবারের সঙ্গে আপনার পেটে গেলেও আপনি আক্রান্ত হবেন না। ভাইরাস একমাত্র আপনার শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে গেলেই সংক্রমণ সম্ভব। তাই কোনো কোভিড রোগী মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তাকে তুলতে গেলে আপনারও করোনা হয়ে যাবে না। বিপদে পাশে থাকুন। তবেই আপনারও বিপদে মানুষকে পাশে পাবেন। শুধু মনে রাখবেন , নাকে বা মুখে হাত দেবেন না। ভয় করলে করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসার পর হাত এলকোহল স্যানিটাইজার দিয়ে স্যানিটাইজ করে ফেলুন বা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুব ভয় করলে পরনের পোশাক কেচে ফেলুন এবং গোসল করে নিন।
  2. কোভিড হলেই মানুষ মরে না, এটি কোনো মরণব্যাধি নয়। ভয় পাওয়ার দরকার নেই । কারণ, এর মৃত্যুর হার দুই শতাংশেরও কম। কিন্তু করোনা রোগী আইসোলেশান -এ থেকে প্রচণ্ডভাবে মানসিক ভাবেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার ইমিউনিটি বা অনাক্রমনতা কমে যায়। তাই রোগীকে সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার দিন এবং পরিচিতদের কোভিড হলে কল করে, ভিডিও কল করে, একসঙ্গে অনলাইন গেইমস খেলে কিংবা মজার কোন ফিল্ম দেখার উৎসাহ দিয়ে তাকে মাতিয়ে রাখুন।
  3. বাড়িতে কোভিড রোগী না থাকলে বাড়ির মধ্যে মাস্ক পরে থাকবেন না। ঘর থেকে না বেরোলে মনের বিকার ঘটা এবং ইমিউনিটি কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই প্রতিদিন বিকেলবেলা বাগান থাকলে সেখানে,  অথবা, না থাকলে ছাদে একটু হেঁটে আসুন ও শরীর চর্চা করে আসুন। এতে ঘরে বসে বসে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমবে। মনে রাখবেন, শুধুমাত্র ইমিউনিটি বুস্টিং খাবার খেয়ে আদৌ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে না, প্রকৃতির সংস্পর্শে না এলে কখনোই বাড়বে না। শরীরচর্চা করা বা নির্জন ছাদে হাঁটার সময় মাস্ক পড়বেন না। সাবধানতা অবলম্বনের এক দারুণ অস্ত্র “মাস্ক” কিন্তু এর অতি ব্যবহার করবেন না তথা বিনা কারণে, যেমন, গাড়ি চালানোর সময় হেলমেট এর ভিতরে পরবেন না। এতে এমনিতেই আপনার শরীরে অক্সিজেন এর ঘাটতি দেখা দেবে।
  4. ঘরে অক্সিমিটার থাকলেও বিনা কারণে ঘন ঘন স্যাচুরেশান চেক করবেন না। এতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন। একমাত্র জ্বর কিংবা অসুস্থ হলে চেক করবেন। ৯৫ অবধি স্যাচুরেশান খুব স্বাভাবিক। তাছাড়াও এই পরিস্থিতিতে মাস্ক ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম দেখানোও একদমই অস্বাভাবিক না। অযথা আতংকিত হবেন না ।
  5. রোগ না হয়ে থাকলে আগে থেকে ভয় পেয়ে ওষুধ কিনে বা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুত করে রাখবেন না। এও এক প্রকার কালোবাজারি। এতে যাদের প্রয়োজন তারা পাচ্ছেন না। দাম বেড়ে যাচ্ছে। সমগ্র মানবজাতির ক্ষতি করবেন না একা হাতে।
  6. কোভিড সংক্রান্ত কোনো রকম সমস্যা হলেই নিকটবর্তী হাসপাতালে যান। অযথা আরেকদিন দেখি বলে দেরী করবেন না বা হাতুড়ে ডাক্তার দেখাবেন না । হাসপাতালে তৎক্ষণাৎ বেড না পেলেও আপনাকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং র‍্যাপিড টেস্ট করানো হবে। হাসপাতালে যত তাড়াতাড়ি যাবেন , আপনার সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা তত বেশি বাড়বে , অন্তত জীবননাশের সম্ভাবনা কম থাকবে ।
  7. কাপড়ের মাস্ক পরা, না পরা সমান। তাই এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করুন , আর অবশ্যই স্যানিটাইজার সাথে রাখুন এবং ব্যবহার করুন। অফিসে বা বাইরে থাকলে অন্তত দুই ঘন্টা পরপর হাত স্যানিটাইজ করুন। একটু হাত ঘষে ফেলার মতো একটি ক্ষুদ্র অভ্যেস যদি আপনার জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে তাহলে তা করবেন না কেনো? এ বিষয়ে ফেইস শিল্ড ও একটি দারুণ সুরক্ষা প্রদানকারী বস্তু। ব্যবহার করতে পারেন।
  8. কোভিড১৯ এর কিন্তু ডানা নেই, উড়ে উড়ে ছড়ায় না এই রোগ। তাই প্রতিবেশীর বাড়িতে কোভিড হলে একদমই ভয় পাবেন না। বরং তাকে সাহায্য করুন। ওষুধ, খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস ঘরের দরজায় পৌঁছে দিন। এতে আপনার করোনা মোটেই হবে না। তারপর ও আপনার ভয় করলে মাস্ক, ফেইস শিল্ড এবং হাতে রাবার গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কিন্তু তাই বলে মানুষের পাশে দাঁড়ানো থেকে সরে আসবেন না। মনে রাখবেন তাদের বিপদের আপনি দাঁড়ালে একদিন আপনার বিপদেও তারা দাঁড়াবে।

আর এটুকুতেই ভয় পাওয়ার আগে মনে রাখবেন, ডাক্তার এবং নার্সরা হাজার হাজার কোভিড রোগীকে নিয়ে কাজ করছেন। তারা কিন্তু সবাই সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছেন না। তাই আপনার প্রতিবেশী, বন্ধু, আত্মীয় বা পরিচিত কেউ আক্রান্ত হলে যতোটুকু সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।

মুলকথা,  মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে। এখন আপনি হেলাফেলা করলে আপনার জীবন বা আপনার পরিবারের মানুষদের জীবনও কিন্তু হেলাফেলা হয়ে যেতে পারে।

তাই নিজের যত্ন নিন। বাহিরে বের হলে মাস্ক পরুন। মানুষের পাশে থাকুন।  আতংকিত না হয়ে সাবধানে থাকুন।





Source link

Leave a Reply