বেশিরভাগ শিশুদেরই প্রায়ই জ্বর হয়। প্রথম কথা হলো, এ নিয়ে একদম ঘাবড়ে যাবেন না , কেননা শিশুদের বেশির ভাগ জ্বরই নিরীহ ধরনের ভাইরাস-সংক্রমণজাত। তবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা মারাত্মক সংক্রমণের কারণেও হতে পারে। তাই আসুন ,জেনে নিন, জ্বর কখন গুরুতর হয়ে ওঠে।
সাধারণত শিশুর বয়স অনুযায়ী শিশুর জ্বর উপসর্গকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে, যথাঃ
- খুব ছোট্ট শিশু—মানে এক বছরের কম বয়সী শিশুর জ্বর,
- ৩ থেকে ৩৬ মাস বয়সী শিশুর জ্বর এবং
- তিন বছরের বেশি বয়সী শিশুর জ্বর
এর মধ্যে খুব ছোট্ট শিশুর, মানে ,এক বছরের কম বয়সী শিশুর জ্বর হলে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা, এদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম, তা ছাড়া তাকে টিকাদান সুরক্ষা ব্যবস্থাও দেওয়া হয়ে ওঠেনি। অন্যান্য অসুস্থতার লক্ষণও তেমন বোঝা যায় না। এ বয়সে জ্বরের জন্য জিবিএম, ই.কোলাই, এইচ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মারাত্মক রোগজীবাণু দায়ী হতে পারে। ৩-৩৬ মাস বয়সী শিশুরা সাধারণত স্ট্রেপটো নিউমোনিয়া, নাইসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস, সালমোনেলা, স্টেফাইলো ইত্যাদি জীবাণুর মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারে।
যেসব রোগের কারণে শিশুদের জ্বর হয়ঃ
- শ্বাসতন্ত্রের অসুখঃ ঠান্ডা-সর্দি, কান পাকা, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি
- ফুসফুসঃ ব্রনকিওলাইটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি
- মুখগহ্বরঃ টনসিলাইটিস, দাঁতের ফোড়া ইত্যাদি
- স্নায়ুতন্ত্রঃ মেনিনজাইটিস
- অন্যান্য কারণঃ আন্ত্রিক অসুখ, অ্যাপেন্ডিসাইটিস, মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ, গিঁটের সংক্রমণ, রক্তে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি, টিকাদান-পরবর্তী জ্বর, ভাইরাসজনিত অসুখ—চিকেন পক্স, হাম, ক্যানসার ইত্যাদি।
শিশুর জ্বর হলে চিকিৎসককে যেসব তথ্য দেয়া জরুরীঃ
- শিশুর জ্বর কত দিন ধরে এবং তাপমাত্রা কত ছিলো
- জ্বরের সঙ্গে র্যাশ, বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, প্রস্রাবে সমস্যা, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট আছে কি না
- বাড়িতে বা আপনজনদের মধ্যে অন্য কেউ অসুস্থ কি না, সেই তথ্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
- এ পর্যন্ত শিশুর কী কী টিকা দেয়া হয়েছে এবং বাড়িতে কী কী ওষুধ সেবন করানো হয়েছে এ ব্যাপারে নির্ভুল তথ্য
- ঘরে পোষা প্রাণী আছে কি না, ইতোমধ্যে শিশুকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়েছে কিনা
- শিশু জন্মগতভাবে কোন রোগে আক্রান্ত কিনা ইত্যাদি ।
জ্বরের ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসাঃ
জ্বরের ব্যবস্থাপনা মূলত দুই ধরনের।
প্রথমত: জ্বর নিয়ন্ত্রণ এবং দ্বিতীয়ত জ্বরের কারণ নির্ণয় করে কার্যকর চিকিৎসা। সাধারণভাবে জ্বর ক্ষতিকর কিছু নয় বরং এটি সংক্রমণ বা প্রদাহের বিরুদ্ধে শরীরের প্রথম প্রতিরোধ।
জ্বর নিয়ন্ত্রণে প্যারাসিটামল (অ্যাসিটোমিনোফেন) বা আইবুফ্রোপেন বিশেষ কার্যকর। শিশু বয়সে জ্বর থামাতে কখনো অ্যাসপিরিন ব্যবহার করতে নেই। স্পঞ্জিং বা বার্থিং (গরম পানিতে) জ্বর উপশমে সাহায্য করে, তবে ঠান্ডা পানিতে গোসল করাবেন না ।
মূলত , তিন বছরের নিচে সব শিশুকেই বেশি জ্বর হলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াই বেশি নিরাপদ । ঘরোয়া পর্যায়ে কিংবা হাতুড়ে ডাক্তার না দেখানোই ভালো ।