Categories
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

হাঁটু ব্যাথার কারণ ও হাঁটুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম


হাঁটুব্যথা বা আর্থ্রাইটিস বা অস্টিও আর্থ্রাইটিস- শব্দগুলোর সাথে দুঃখজনকভাবে হলেও আমরা প্রায় সবাই পরিচিত । বয়স একটু বাড়তে থাকলেই এই সমস্যাগুলো যেন আমাদেরকে ঘিরে ধরে । কিভাবে আমাদের শরীরের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জয়েন্টকে ভালো রাখা যায় তথা হাঁটু ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আসুন জেনে নিই ।

আমাদের পুরো শরীরের উপরিভাগের ওজন ধারণ করার একমাত্র মাধ্যম এই দুই হাঁটু। এর সাথে যদি মাথায় বা কাঁধে কোন বোঝা নেয়া হয় তাও এর সাথে যুক্ত হয়। এ কারণে হাঁটু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। হাঁটু ব্যথার কয়েকটি কারণ রয়েছে ,যেমন, কোন কারণে আঘাত পাওয়া হাঁটু ব্যথার অন্যতম একটি কারণ। যে কোনো বয়েসেই আঘাতজনিত ব্যথা হতে পারে। আঘাতের মাধ্যমে হাঁটু নিয়ন্ত্রণকারী মাংসপেশি, লিগামেন্টস, হাড় ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার ,
মোটরসাইকেল বা অন্যান্য যানবাহন দুর্ঘটনাও হাঁটুসহ অন্যান্য ব্যথার কারণ। কোনো কোনো সময় এটা তাৎক্ষণিক বোঝা না গেলেও পরে ব্যথা অনুভূত হয়।

এছাড়া ও যারা কায়িক শ্রম বেশি করেন , বিশেষ করে ভারবাহী কাজ করেন , তাদের ক্ষেত্রে,  অস্বাভাবিক ওজন বহন করলেও হাঁটুর উপর চাপ পড়ে ভেতরের বা বাইরের লিগামেন্টস ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
আবার, যে সব এক্সারসাইজ হাঁটুর সঙ্গে সম্পৃক্ত সে সব ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত এক্সারসাইজজনিত অতিরিক্ত চাপে ছোট মাংসপেশি বা লিগামেন্টস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হতে পারে।

কারণ যাইহোক, নিয়মিত ব্যায়াম, কিছু খাবার (লাল মাংস, ক্রিম, লিভার, কমল পানীয়, এলকোহল, সামুদ্রিক মাছ) এ সতর্কতা এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন এই রোগ থেকে আমাদের নিরাপদ রাখতে পারে। আসুন, হাঁটু ব্যথা কিভাবে সারিয়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে জেনে নিই ।

ব্যায়ামঃ হাঁটু ব্যথায় ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী। ব্যায়ামের মাধ্যমে জয়েন্টে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং জয়েন্ট নিয়ন্ত্রণকারী মাংস পেশী, লিগামেন্টস, স্নায়ু নিউট্রিশন পায় ও কর্মক্ষমতা বাড়ে। যে কারণে ব্যথা কমে যায়। ব্যায়ামের মাধ্যমে জয়েন্টসের মুভমেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও আমরা স্বাচ্ছন্দে সব কাজ করতে পারি। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের মধ্যে এনডরফিন নামক পদার্থ নিঃসরণ বাড়ে যা আমাদের ব্যথা কমাতে সক্রিয় থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যথা অবস্থায় ব্যায়াম করা যাবে না। আর ভালোভাবে না জেনে এমন ধরনের ব্যায়াম করা যাবে না, যাতে আমাদের হাঁটু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

হাঁটুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম

যা আপনার হাঁটুকে সবসময় সচল রাখবে ও শক্তি যোগাবে ।

    1. স্ট্রেইট লেগ রাইজঃ ফ্লোরে শুয়ে আপনার এক পা সোজা করে উপরে উঠান এবং পায়ের পাতা উপরের দিকে বাকা করুন। এভাবে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এতে আপনার হ্যমেস্ট্রিংমাসল শক্তিশালী হবে। এভাবে প্রক্রিয়া টি উভয় পায়ে ৫-১০ বার করুন।
    2. প্রন স্ট্রেইট লেগ রাইজঃ ফ্লোরে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার যে কোনো এক পা হাঁটু ভাজ না করে সোজা করে উপরের দিকে উঠান যতটুকু পারেন। পায়ের পাতা নিচের দিকে সোজা রাখুন। এভাবে ধরে রাখুন ৩-৫ সেকেন্ড। প্রক্রিয়াটি উভয় পায়ে ৩-৫ বার করুন।
    3. ওয়াল স্কোয়াটঃ আপনার শরীরের পেছনের অংশ দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে দাড়ান। হাঁটু ভাঁজ করে চেয়ারে বসায় মতো অবস্থানে আসুন ও ধরে রাখুন ৫-১০ সেকেন্ড। এভাবে প্রক্রিয়াটি ৫-১০ বার করুন।
    4. কাফ রেইজঃ সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার দুই পা এক সঙ্গে শুধু পায়ের অংগুলের উপর ভর রেখে দাঁড়ান। ১০ -১৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন ও প্রক্রিয়াটি ৩-৫ বার করুন।
    5. সাইড লেগ রাইজঃ ডানদিকে কাত হয়ে শুয়ে পরুন। বাম পা সোজা করে উপরে উঠান হাঁটু ভাঁজ না করে। পায়ের পাতা ডান পায়ের দিকে হালকা বাকিয়ে রাখুন। এভাবে উভয় পাশে ৩-৫ বার করুন ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

হাঁটুব্যথার চিকিৎসাঃ

     হাঁটুব্যথায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ঔষধ হিসাবে এনএসএইড ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘ মেয়াদি এসকল ওষুধ সেবনে কিডনি সমস্যাগ্রস্ত হতে পারে। প্রেশার বেড়ে যেতে পারে। রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা ও আলসারের মতো সমস্যাও হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এনএসএইড এর বিকল্পও থাকে না। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

উপরোক্ত সমস্যাগুলোর কারণে এখন হাঁটু ব্যথায় “ইন্টারভেনশন” চিকিৎসা খুবই কার্যকারী। এতে গুরুতর কোন সাইড ইফেক্ট নেই আবার দীর্ঘ মেয়াদে এনএসএইড এর ব্যবহার কমে যায়। এতে মূলত ব্যথার চক্র ভেঙে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একবারই যথেষ্ঠ হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে একাধিক প্রয়োজন হতে পারে। ইন্টারভেনশনগুলো প্রায় ব্যথা মুক্তভাবে করা হয়। ইন্টারভেনশনাল থেরাপির মধ্যে পিআরপি (প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা) থেরাপি একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি।

ইন্টারভেনশন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে একটি অত্যাধুনিক ও কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি হলো পিআরপি বা প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা । বিভিন্ন চিকিৎসায় এখন এটি ব্যবহার হচ্ছে। ব্যথার চিকিৎসায় বিশেষ করে হাঁটুব্যথায় এটি খুবই কার্যকারী একটি পদ্ধতি। পিআরপি চিকিৎসার ক্ষেত্রে রুগীর শরীর থেকে ২০ সিসি রক্ত নেয়া হয়। সেটি নির্দিষ্ট কনটেইনারে রেখে সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে দিয়ে রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা করা হয়। যেটিতে প্রচুর পরিমাণে প্লাটিলেট ও অন্যান্য ফ্যাক্টর থাকে। পরে এই প্লাজমা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে দেয়া হয়।

কিছু ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনের সাহায্যে আক্রান্ত স্থান দেখে এই পি আর পি দেয়া হয়। ব্যথার স্থানে এটি দেয়া হলে লোকাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিলিজ করে যা মাংস পেশী টেন্ডন বা লিগামেন্টস এর ক্ষত পূরনে সাহায্য করে ও ব্যথা কমিয়ে দেয়। এটি মূলত ব্যথার মূল কারণের চিকিৎসা করে তাই এটা খুবই কার্যকারী চিকিৎসা পদ্ধতি। পাশাপাশি ব্যথার ঔষধ শুধু ব্যথা কমিয়ে রাখে কিন্তু মূল কারণ থেকেই যায় এবং আরো গভীর হয়। হাঁটুব্যথার যে কোনো ধরনের ইনজুরির জন্য পিআরপি অত্যন্ত কার্যকরী।

অনেকের ধারণা অস্টিও আরথ্রাইটিসের চিকিৎসা নেই। একবার হলে আর রক্ষা নেই। এটি ভুল ধারণা। বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা এটি প্রমাণিত যে পিআরপি চিকিৎসা অস্টিও আরথ্রাইটিস এ খুবই কার্যকারী। অস্টিও আরথ্রাইটিস এ হাড়ের সংযোগস্থলে আরটিকুলার কারটিলেজ এ যে ক্ষয় হয় পিআরপি দেয়ার ফলে তা সেই ক্ষতস্থানে লোকাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিলিজের মাধ্যমে ক্ষতপূরণে ভূমিকা রাখে। অস্টিও আরথ্রাইটিসের প্রথম ও দ্বিতীয় স্টেজে এটি খুবই কার্যকরী। তৃতীয় বা শেষ স্টেজে এটি ব্যথা কমিয়ে দেয় ও হাঁটু প্রতিস্থাপনের মতো জটিল অপারেশনকে অনেক ক্ষেত্রে রহিত করে।

শেষকথা হলো , হাঁটু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই সতর্ক হোন। হাঁটুর ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করুন , যাতে ডাক্তার পর্যন্ত যেতে না হয় , তথাপি যদি ব্যথায় আক্রান্ত হন , তবে সঠিক পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণ করুন।





Source link

Leave a Reply