সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করা নানজীবার একদম শুরু থেকেই ইচ্ছে ছিল বিদেশে পড়াশোনা করার। তাই তো এই লকডাউনেই সে এইচ এস সি পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে দেয়। আর নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পেয়েই কানাডায় উড়াল দেয় নানজীবা। আপনি যদি নানজীবার মত নিজেকে এইচএসসি-র পর এই অবস্থায় দাঁড় করাতে চান তবে আপনাকে কিছু জিনিস মনে রাখতে হবে। অসংখ্য শিক্ষার্থী HSC এর পর বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ভালো রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও সঠিক তথ্যের অভাবে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়।
যারা এইচএসসির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী, তাদের জন্যই আজকের এই ব্লগ। বিদেশে উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা, এইচএসসির পর বিদেশে স্কলারশিপ, বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা, স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়, IELTS করতে কি যোগ্যতা লাগে, বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আমেরিকায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়, কানাডায় উচ্চশিক্ষা, বিভিন্ন দেশের সরকারি স্কলারশিপ ও ফুল ফ্রি স্কলারশিপ, কোন কোন দেশে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সহজ, স্টুডেন্ট ভিসা যোগ্যতা, মূলত এসবই আজকের আলোচনার মূল বিষয়।
HSC -এর পর বিদেশে পড়াশোনা করতে যাবেন কেন?
উচ্চমাধ্যমিকের বা এইচএসসি-র পরই আসলে বাইরে পড়াশোনা করতে যাবার মোক্ষম সময়। তাছাড়া স্নাতক লেভেলে সব জায়গা থেকেই স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ থাকে। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ও জীবনযাত্রা, গবেষণা ও চাকরির ভালো ক্ষেত্র থাকার কারণে অনেকেই বিদেশের দিকে ঝুঁকছেন।
এইচএসসি-র পর বিদেশে পড়তে গেলে অনেক বিষয় সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে শেখা এবং স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে শেখার ফলে শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় অধিক দক্ষভাবে চিন্তা ও কাজ করতে শেখে। তাই দেখা যায়, বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা কখনো কখনো ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
যারা বিদেশে থেকে পড়াশুনা করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা অন্যদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি স্বাধীনচেতা ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে থাকেন এবং বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে থাকেন। বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা অনেক মূল্যবান, যদি দেশে এসে সেই অর্জিত জ্ঞান আপনি সঠিক জায়গায় কাজে লাগাতে পারেন।
এইচএসসির পর বিদেশে স্নাতক করতে হলে আগে থেকে পরিকল্পনা করা জরুরি। অন্তত মাস ছয়েক আগে থেকেই সেই পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। কারণ নিজের আর্থিক সামর্থ্য বুঝে শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার মতো বড়ো সিদ্ধান্ত একটু বুঝে শুনে নেওয়া উচিত।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার প্রস্ততি:
”কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি”- বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে এই চিন্তাটাই মাথায় আসে। চলুন তাহলে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা যাক।
টার্গেট ঠিক রাখা:
অমুক এইচএসসি-র পর বিদেশে পড়তে যাচ্ছে দেখে আপনারও যেতে হবে, ব্যাপারটা এমন না। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে আমরা অনেকেই বাইরে যেতে চাই ৷ কিন্তু এটা যেহেতু জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত, সেহেতু এটা নিতে হবে অনেক ভেবেচিন্তে। আপনার বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অর্থ, পরিবারের সম্মতিসহ সবকিছুই বিবেচনায় রাখতে হবে।
ভালো ফলাফল:
যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন হয় না, তবুও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চাইলে ভালো ফলাফল করাটা জরুরি। আপনি যে প্রোগ্রাম বা কোর্সের জন্যই বিদেশে যান না কেন, আপনার রেজাল্ট যত ভালো হবে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আপনার ভর্তি এবং স্কলারশিপের সুযোগ তত বেশি হবে।
সহশিক্ষা কার্যক্রম:
ইসিএ বা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস আপনার আবেদনপত্রে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তি, খেলাধুলা, স্বেচ্ছাসেবা, লেখালেখি, রান্না, বিতর্ক, ফটোগ্রাফি, অলিম্পিয়াডের মতো বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী হতে পারে। আর এই আগ্রহ থাকার ব্যাপারটি শুধু বললেই হবে না, দেখাতে হবে নিজের আবেদনপত্রে বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে, শিক্ষকদের সুপারিশপত্র এবং সাক্ষাৎকারে জীবনের ছোট ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে।
ভাষাগত দক্ষতা:
বেশিরভাগ দেশে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত হওয়ায় IELTS কিংবা TOFEL -এ ভালো স্কোর থাকতে হবে। এসব স্কোরের মেয়াদ থাকে দুই বছর।
যুক্তরাষ্ট্রে যারা ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে স্নাতকোত্তর করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য প্রয়োজন GRE (Graduate Record Examination)। আর যারা ব্যবসা অথবা মানবিক বিষয়ে পড়তে ইচ্ছুক তাদের জন্য আছে GMAT (Graduate Management Admission Test)। আর যারা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বিদেশে যেতে চায় অথবা বিদেশে কোন কলেজে ভর্তি হতে চায়, তারা SAT (Scholastic Aptitude Test) দিয়ে থাকে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে সাধারণত আমেরিকাভিত্তিক GRE বা GMAT প্রয়োজন হয় না। GRE/ GMAT এর মেয়াদ ৫ বছর থাকে।
IELTS Course by Munzereen Shahid
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
তবে যারা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করেন তারা IELTS স্কোর ছাড়াও বিদেশে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতে পারেন, যেহেতু তাদের পড়াশোনার মাধ্যম বা Medium of Instruction হলো ইংরেজি। বাইরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় Medium of Instruction কে IELTS বা TOEFL এর সমতুল্য হিসেবে গ্রহণ করে। সাধারণত বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সাম কন্ট্রোলার থেকে এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রি দপ্তর থেকে এই সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়।
চীন, জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে যেতে চাইলে এসব দেশের ভাষা আগেভাগেই শিখে নেওয়াটা ভালো। ভাষা জানা থাকলে এসব দেশগুলোতে বৃত্তি পাওয়াটা যেমন সহজ হয়, তেমন পার্টটাইম কাজের ক্ষেত্রেও এই ভাষার দক্ষতা উপকারে আসে।
প্রোগ্রাম নির্ধারণ:
কোর্স বা প্রোগ্রাম নির্ধারণের সময় বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
আপনি কোন বিষয়ে পড়তে চান, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কোনটার চাহিদা বেশি, দেশীয় চাকরি বাজারে কী ভালো হবে, কী পড়লে সহজেই পেশাগত উন্নতি ও লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব, আপনি যেই দেশে পড়তে যেতে আগ্রহী সেই দেশে আপনার পছন্দের বিষয়ে উচ্চশিক্ষার মান বা পদ্ধতি বিশ্বে কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা কতটুকু সময়োপযোগী, ভবিষ্যতের পেশাগত জীবন, কোর্সটিতে পড়াশোনা শেষে কোথায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলবেন, সেখানের সুযোগ-সুবিধা, সম্ভাবনা ও অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতার মাত্রা কতটুকু, আপনার বর্তমান যোগ্যতার সাপেক্ষে কোন কোর্সটি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী, এই কোর্সের কোনো বিকল্প কোর্স আছে কি না, মেয়াদ ও টিউশন ফি কত, মূলত এসব বিষয়েই চোখ রাখতে হবে।
এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য আপনি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য ও পরামর্শকেন্দ্রের সঙ্গে অথবা ওই কোর্সে পড়াশোনা করেছেন বা করছেন এমন কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় থাকলে আগে থেকেই আলাপ করে নিতে পারেন।
ক্রেডিট ট্রান্সফার:
দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি কোর্সে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন বা করছেন। এখন আপনি ওই কোর্সই বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী। সেই ক্ষেত্রে দেশে করা কোর্সটির ক্রেডিট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অব্যাহতি পত্র দাবি করতে পারেন। আপনার কোর্সটির জন্য কতটুকু ক্রেডিট পাবেন তা নির্ধারণ করবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এরজন্য যা যা লাগবে:
- একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, প্রত্যয়নপত্র।
- কোর্সের আউটলাইন ও পাঠ্যতালিকা।
- কোর্স লেভেল সম্পর্কিত তথ্যাদি।
- কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ কর্তৃক সুপারিশনামা।
- কোর্স অ্যাসেসমেন্টের পদ্ধতি।
- গ্রেডিং সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য।
- কোর্সের মেয়াদ, লেকচার-ঘণ্টা, ল্যাবরেটরিতে কাজের ঘণ্টা, ফিল্ডওয়ার্ক ইত্যাদি।
- পরীক্ষা, রচনা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি।
HSC এর পর বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া:
সব কাজ ঠিকঠাক হয়ে গেলে এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার পালা। একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক সময়ে সেশন শুরু হয়, তাই তাদের ভর্তি শুরুর সময় মনে রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন প্রক্রিয়া (Source: Stoodnl)
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা:
এইচএসসির পর বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে প্রথমেই দেখতে হবে আপনার সব প্রয়োজনীয় একাডেমিক কাগজপত্রসহ যাবতীয় ডকুমেন্টস ঠিকঠাক আছে নাকি। কোনো ডকুমেন্ট বাদ পড়ে গেলে তা বানিয়ে নিতে হবে অথবা সেই সংক্রান্ত অফিস থেকে সংগ্রহ করে নিতে হবে৷ নিজের আপডেটেড সিভি ও কাভার লেটারসহ সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ইংরেজিতে করিয়ে নিতে হবে। আবেদনের ক্ষেত্রে মূলত:
- পাসপোর্ট
- জম্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট
- জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
- এসএসসি-র সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট এবং টেস্টিমোনিয়াল
- এইচএসসি-র ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ও টেস্টিমোনিয়াল
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP) লেটার
- লেটার অব মোটিভেশন
- লেটার অব রিকমেন্ডেশন
- IELTS / TOEFL / ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট
আবেদনের সময় অবশ্যই কী কী ডকুমেন্ট চাওয়া হয়েছে তার লিস্ট দেখে নেবেন ।
ছবি এবং প্রয়োজনীয় সকল ফটোকপি অবশ্যই সত্যায়িত করে নিতে হবে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে সকল কাগজ পত্রের মূলকপি দেখানো সাপেক্ষে বিনামূল্যে সত্যায়িত করা যায়। এছাড়া নোটারি পাবলিক থেকেও সত্যায়িত করা যায়। ভর্তির কাজ অনলাইনে হলেও অনেকক্ষেত্রে কিছু ডকুমেন্টের হার্ডকপি আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরিয়ার করে পাঠাতে হবে।
স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP- Statement of Purpose):
এইচএসসি-র পর বাইরে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যেসব বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে তার মধ্যে এসওপি বা স্টেটমেন্ট অব পারপাস অন্যতম। SOP হলো আপনার ব্যক্তিগত গল্প। এখানে অমুক বিষয়টি কেন পড়তে চাচ্ছেন, পূর্ব অভিজ্ঞতা কী, গ্র্যাজুয়েশন শেষে দেশে ফিরে এসে কী করবেন, অন্য দশজনকে বাদ দিয়ে আপনাকে কেন নেওয়া উচিত- ইত্যাদি বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে গল্পের মতো করে লিখতে হবে।
আপনি মানুষ হিসেবে কেমন, উচ্চশিক্ষার চাপ সামলাতে আপনি কতটুকু প্রস্তুত আছেন, আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রতিভা, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার একটা প্রতিচ্ছবি অ্যাডমিশন কমিটি এই এসওপি থেকে জেনে নেয়। মিথ্যের আশ্রয় না নিয়ে আপনি যেমন, ঠিক তেমন করেই প্রাসঙ্গিক ও প্রেরণামূলকভাবে নিজেকে নিয়ে ও নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে লিখবেন।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা -এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই
প্রথমেই যে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, তা হলো দেশ নির্বাচন। অর্থাৎ আপনি কোন দেশের কোন শহরে যাবেন। আপনাকে জানতে হবে কোন দেশগুলো উচ্চশিক্ষার মানের দিক থেকে এগিয়ে আছে। বর্তমানে শিক্ষার গুণগত মান বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া, জাপান এগিয়ে আছে।
তবে এই দেশগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। কারণ একেকটি দেশের পড়াশোনার ধরন, টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার খরচ ও ভর্তি চাহিদায় পার্থক্য আছে। আপনার বাজেট, আগ্রহ ও যোগ্যতার সাথে সব দিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে যে দেশটি, সেটিকেই বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের পরবর্তী ধাপ হলো বিষয় নির্বাচন। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনেক বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে যেগুলো দেশে নেই। ফলে আপনাকে এমন একটা বিষয় বেছে নিতে হবে যেটির প্রতি আপনার আগ্রহ রয়েছে, ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে এবং বিষয়টিতে পড়াশোনা করে পরবর্তীতে ভালো কোনো চাকরির সুযোগও রয়েছে। ঝোঁকের মাথায় কোনো বিষয় পছন্দ করলে চলবে না।
এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন। উন্নত দেশে পেছনের সারির ইউনিভার্সিটি যেমন রয়েছে, তেমনি তুলনামূলকভাবে একটু কম উন্নত দেশে আছে প্রথম সারির ইউনিভার্সিটি। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে টিউশন ফি’র তারতম্যও আছে। অনেকদেশে ফুল ফ্রি স্কলারশিপের ব্যবস্থা প্রচলিত নেই। তাই শিক্ষার গুণগত মান, পরিবেশ, বৈশ্বিক র্যাংকিং, টিউশন ফি, বৃত্তি সুবিধা, কোর্সের মেয়াদ, পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ, নাগরিকত্ব, জীবনমান, আবাসন ব্যবস্থা, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আবহাওয়া ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেই আপনাকে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। এগুলো দেখার একটা সহজ উপায় হল যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে আপনি ইচ্ছুক, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট ঘাঁটা। ধৈর্য ধরে সব নোট নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে:
- আপনার পছন্দকৃত বিষয় আছে কি না
- পড়াশোনার মান কেমন
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের মান কেমন
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান কোথায়
- কোর্স মেয়াদ ও টিউশন ফি
- স্কলারশিপ সুবিধা
- আবাসন ব্যবস্থা
- ভর্তি যোগ্যতা
যেকোনো একটা দেশে আবেদন না করে একাধিক দেশের ৪-৫টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে ভালো ফলাফল পাওয়ার সুযোগ বেশি।
এখন জানবো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ‘স্কলারশিপ’ নিয়ে৷ বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে অনেকেই পড়তে যেতে চান। কারণ বাইরে পড়াটা বেশ ব্যয়বহুল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অনেকেই কীভাবে স্কলারশিপ খুঁজতে হয় সেই বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও বাস্তব জ্ঞান না থাকার কারণে এই স্কলারশিপ পাওয়ার স্বপ্ন মাঝেমধ্যে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
এইচএসসির পর বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে যেসব বিষয় জানা জরুরি:
বিদেশের টিউশন ফি তুলনামূলক বেশি হওয়ায় অনেকেই সেই খরচটা বহন করতে পারেন না। কিন্তু যদি আপনার রেজাল্ট, ভাষাগত দক্ষতা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম ভালো হয়ে থাকে তাহলে স্কলারশিপ খুব সহজেই হাতের নাগালে চলে আসবে।
স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে হলে যেসব বিষয় জানা জরুরি:
- স্কলারশিপের মেয়াদ কত দিন এবং নবায়ন করা যাবে কী না
- নবায়ন করার সুযোগ থাকলে কী ধরনের যোগ্যতা লাগবে
- স্কলারশিপের অর্থ কী কী খাতে খরচ করা যাবে
- আপনার পক্ষে স্কলারশিপের অর্থে সেখানকার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কী না
এইচএসসির পর বিদেশে স্কলারশিপ:
আমাদের দেশ থেকে বর্তমানে প্রতি বছর স্নাতক করতে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী বাইরে পাড়ি দিচ্ছেন৷ তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই লক্ষ্য থাকে ফুল রাইড স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার।
যারা স্কলারশিপ নিয়ে এইচএসসির পর দেশের বাইরে পড়তে যেতে চান, তাদের জন্য ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, রাশিয়া, আজারবাইজান, চীন, জাপান, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মানি, ব্রুনাই, তুরস্কের সরকারি বৃত্তি চালু রয়েছে।
এরকম বিখ্যাত কয়েকটি বৃত্তি হলো জাপানের মনবুশো বৃত্তি ও মনবুকাগাকুশো বা মেক্সট বৃত্তি, এমএইচটিটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, জার্মানির ডিএএডি, অস্ট্রেলিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ, যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, শেভেনিং স্কলারশিপ, কানাডার আইলট স্কলারশিপ, কানাডার হাম্বার ইন্টারন্যাশনাল এন্ট্রান্স স্কলারশিপ ইত্যাদি। এছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের ফুল ফ্রি স্কলারশিপ এবং আংশিক বৃত্তির সুযোগ রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইউনিভার্সিটিগুলোতে নাম মাত্র ব্যয়ে অথবা বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে জার্মানিতে। জার্মান সরকার তাদের রাষ্ট্রীয় বাজেটের একটি বিরাট অংশ ব্যয় করে শিক্ষা খাতে। তাই এখানে স্কলারশিপসহ বেশ ভালো মানের শিক্ষা লাভ করার সুযোগ তুলনামূলক বেশি। আপনি যদি আন্ডারগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ নাও পান, তবে গ্রাজুয়েট কোর্সের জন্য প্রতি বছর মাত্র ৩৫০০ ডলার খরচ হবে।
উত্তর পূর্ব ইউরোপের স্ক্যান্ডেনেভিয়ান পাঁচটি দেশে (ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন) বেশ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পড়ালেখা করা যায়। যেমন, নরওয়েতে বিশ্বমানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি স্তরে উচ্চশিক্ষা একদম ফ্রি, সেক্ষেত্রে নরওয়েজিয়ান ভাষায় দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডেও বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এসব বৃত্তির মাধ্যমে বিনামূল্যে পড়ালেখা ছাড়াও থাকা-খাওয়ার জন্য বৃত্তি পাওয়া যায়।
বৃত্তিগুলোর আবেদনের সাধারণ সময়কাল ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে। তাই এইচএসসির রেজাল্টের পর আপনি প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য হাতে বেশ কিছু দিন সময় পাবেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বৃত্তিও দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে আবেদনের সময়ই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি সম্পর্কে ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিন।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা:
ভাষাগত দক্ষতা
প্রথমেই আপনাকে IELTS বা TOEFL দিয়ে নিতে হবে। অনেকক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট না লাগলেও, আপনি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য নানান জায়গায় আবেদন করবেন, তাই তৈরি হয়ে কাজে নামাই শ্রেয়। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ন্যূনতম আইইএলটিএস (IELTS) ব্যান্ড স্কোর ৭.০ এবং প্রতিটি সেকশনে ৬.৫ চাওয়া হয়। আপনি যে বিষয়ে পড়তে চান, সেই বিষয়ের চাহিদা দেখে সে অনুযায়ী IELTS এর প্রস্তুতি নিয়ে টেস্টটি দিতে হবে।
লেটার অব রেকমেন্ডেশন (Letter of Recommendation)
আবেদনের সময় এক থেকে তিন জনের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার (LOR) নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করতে পারবেন যারা আপনার সম্পর্কে ভালো জানেন, যেমন যারা কিনা আপনাকে চেনেন, আপনার কাজ সম্পর্কে ধারণা রাখেন এবং তাঁরা আপনার পরিবারের কেউ নন। তাই দুজনকে ঠিক করা ভালো।
প্রথমত, আপনার একজন সরাসরি শিক্ষক, দ্বিতীয়ত, আপনি যদি কোনো চাকরি করে থাকেন, তাহলে আপনার সরাসরি ঊর্ধ্বতন কেউ। এমন কারও নাম রেফারেন্সে দিন, যাঁর সঙ্গে আপনার ভালো সম্পর্ক আছে, যিনি আপনার জন্য সময় বের করে রেফারেন্স লিখে দেবেন।
স্টেইটমেন্ট অব পারপাস (Statement of Purpose)
আপনাকে একটি স্টেইটমেন্ট অব পারপাস বা এসওপি (SOP) লিখতে হবে। কেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান, সেটিই মূলত ওখানে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে হবে। তবে ভুলেও এটা ইন্টারনেট থেকে কপি করবেন না। সময় নিয়ে নিজের মতো করে লিখুন।
এসব তৈরি করার পাশাপাশি আপনি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান ও বৃত্তি পেতে চান, সেখানকার প্রফেসরদের প্রোফাইল দেখুন। আপনার আগ্রহের সঙ্গে যাদের কাজের মিল আছে, তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে মেইল পাঠান। তবে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে একাধিক প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না। একজন প্রফেসর কোনো কারণে প্রত্যাখ্যান করলে তারপরই ওই বিভাগের অন্য প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
এইচএসসির পর বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়:
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (UGC) ওয়েবসাইটেও বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বা সরকারি স্কলারশিপের নোটিশ পাওয়া যায়। স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চীন, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং রাশিয়া। এইসকল দেশের সরকারি স্কলারশিপ সংক্রান্ত খোঁজখবর মিলবে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটগুলোতে।
সেখান থেকে অনলাইনেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বৃত্তির আবেদন করতে পারেন। এছাড়াও ফেসবুকে বিদেশে স্কলারশিপ-সংক্রান্ত অনেক গ্রুপ রয়েছে। সেগুলোতে যোগ দিন এবং নিয়মিত বিভিন্নজনের পরামর্শ পড়তে থাকুন। এগুলো কাজে লাগবে। আপনার কোনো পরামর্শ থাকলেও সেখান থেকে পেতে পারেন।
আর আপনি যদি নিজ খরচে পড়তে যান তাহলে আপনার পছন্দের কোর্সটি শেষ করতে মোট কত টাকা খরচ হবে এবং কীভাবে ফি পরিশোধ করতে হবে তা মাথায় রাখবেন। বিশ্ববিদালয়ে ই-মেইল করলে তারা মোট খরচের একটি খসড়া হিসাব ও পরিশোধের পদ্ধতি জানিয়ে দেয়। মেইলে সাধারণত টিউশন ফি, আবাসন খরচ, খাবার খরচ, বইপত্র বাবদ খরচ, ইন্সুরেন্স খরচের একটা তালিকা দেওয়া হয়।
আপনি চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে না থেকে কোনো বাড়িতে পেইং গেস্ট হিসেবে থাকতে পারেন। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ সেমিস্টারের টিউশন ফি একসাথে দিলে কিছুটা কমিশন বা ছাড় পাওয়া যায়।
সরকারি স্কলারশিপের ওয়েবসাইট:
বিদেশে উচ্চশিক্ষা: ৫টি জনপ্রিয় স্কলারশিপ
৫টি আন্ডারগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম : |
||
স্কলারশিপের নাম ও দেশ |
তথ্য |
লিংক |
জাপানের MEXT Scholarship | আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য জাপান সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম পছন্দের একটি নাম। জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কলারশিপ হচ্ছে ‘মনবুকাগাকুশো’ স্কলারশিপ, যাকে মেক্সট স্কলারশিপ ও বলা হয়।
এর বিশেষত্ব হচ্ছে এই স্কলারশিপ এ রয়েছে বিশাল অঙ্কের ভাতা, কিন্তু বৃত্তির আওতায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে প্রতিবছর সর্বোচ্চ মাত্র দুইশোজন বাংলাদেশি সুযোগ পান! সাধারণত মার্চের শেষে বা এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃত্তির সার্কুলার প্রকাশিত হয়। |
এখানে ক্লিক করুন |
চীনের CSC Scholarship | সিএসসির পূর্ণরূপ হচ্ছে- চাইনিজ স্কলারশিপ সেন্টার, এটি চীন সরকারের বৃত্তি। এর আওতায় আছে ২৫০ চীনা বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন ও চারুকলা ইত্যাদি বিষয়ে ফুল ফান্ড স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
অন্যান্য বিদেশি স্কলারশিপের মতো এখানেও স্কলারশিপ পেতে চাইলে চীনা ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে! সেটি না থাকলে স্কলারশিপ পাওয়ার পর তোমাকে চীনে গিয়ে এক বছর বাধ্যতামূলক চীনা ভাষা শিখতে হবে! (বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলে চীনা ভাষায়। বিশ্ববাণিজ্যেও চীনারা ক্রমেই শীর্ষস্থান দখল করে নিচ্ছে। তাই চীনা ভাষা একটু কষ্ট করে একবার শিখে নিলে তা সারাজীবন কাজে আসবে) সার্কুলার সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে প্রকাশিত হয়। এজন্য একাডেমিক পরীক্ষার সনদ, মার্কশিট, দুটি প্রত্যয়ন পত্র, মেডিকেল সার্টিফিকেট সাবমিট করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হলে পুরো ফর্মটি প্রিন্ট করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। |
এখানে ক্লিক করুন |
রাশিয়ান সরকারি স্কলারশিপ | বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমেই মোড়লের আসন পুনরুদ্ধারে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অত্যন্ত অগ্রসর এ দেশটির প্রচারবিমুখতার কারণে তাদের সম্পর্কে বাইরের দেশের মানুষের তেমন পরিষ্কার ধারণা নেই। কিন্তু রাশিয়ার সরকারি বৃত্তি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে উন্নত বিশ্বে।
এ বৃত্তিতে ফুলফান্ড পেতে চাইলে একটি জটিলতা রয়েছে- তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে রাশিয়ান ভাষায়! তবে তাতে ভয়ের কিছু নেই, সরকারি খরচেই মূল কোর্সের আগে সাত মাস রাশিয়ান ভাষা এবং দুই মাস রাশিয়ান সংস্কৃতির ওপর কোর্স করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বৃত্তির আবেদন গৃহীত হলে পড়তে যেতে কেবল বিমান ভাড়া আর খাবারের খরচটা নিজের পকেট থেকে দিতে হবে; ভিসার খরচ, টিউশন, বাসস্থান সহ সব কিছুর খরচ সরকার বহন করবে! রাশিয়া পৌঁছেই প্রথমে একশো-দেড়শো ডলার দিয়ে স্বাস্থ্য বীমা করিয়ে নিতে হবে। মাসিক খরচ সর্বোচ্চ দেড়শো থেকে আড়াইশো ডলারের মধ্যেই পুষিয়ে যাবে। স্নাতক পর্যায়ে তুমি সায়েন্স, কমার্স, আর্টসের পনেরটিরও বেশি বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। মেডিকেলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকেই একটি সমস্যার মুখোমুখি হয়- বাংলাদেশের পড়াশোনার ডিগ্রি অনেক দেশে গৃহীত হয় না। তবে রাশিয়ায় এ সমস্যা নেই। সেখানে মেডিকেলে ছয় বছর মেয়াদী ডিগ্রির নাম ‘ডক্টর অব মেডিসিন’ (এমডি), যেটি বাংলাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল এসোসিয়েশন কর্তৃক স্বীকৃত। সার্কুলারের আবেদন ফর্মে মেডিকেল সার্টিফিকেটের সঙ্গে তোমার সব একাডেমিক সার্টিফিকেট, নম্বরপত্র, জন্মসনদ ও পাসপোর্টের ফটোকপির নোটারাইজড কপি যুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সুপারিশকৃত আবেদনকারীরা ঢাকার ‘রাশিয়ান সেন্টার অব সায়েন্স অব কালচার’ -এ মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে। সেখানে পরীক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতা দেখা হয় যার ভিত্তিতেই হবে চূড়ান্ত মূল্যায়ন। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে- বৃত্তির সার্কুলার প্রকাশের পর আবেদনের সময় থাকে খুব অল্প কিছুদিন, তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে। |
এখানে ক্লিক করুন |
দক্ষিণ কোরিয়ার KGSP Scholarship | এই বৃত্তি পেতে চাইলে তোমাকে বাধ্যতামূলক কোরিয়ান ভাষা শিখতে হবে এক বছর! তবে খরচ নিয়ে সমস্যা নেই, পুরো ব্যয়ভার কোরিয়ান সরকার বহন করবে। তবে একটি শর্ত রয়েছে- এইচএসসি পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে ৮০% নম্বর পেতে হবে! স্নাতক পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়া প্রায় সব বিষয়েই আবেদন করা যাবে।
সার্কুলারের জন্য চোখ রাখো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির ভেতর যেকোনো সময় প্রকাশিত হতে পারে সার্কুলার। বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি কোরিয়ান সরকার বেশ উদার। টিউশন, থাকা-খাওয়া, ভিসার খরচ, মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি বিষয়ে মিলবে মোটা অঙ্কের ভাতা! শুধু তাই নয়, বছরে একবার দেশে আসা-যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উপহার পাবে রাউন্ড ট্রিপ বিমানের ইকোনমি ক্লাস টিকিট! |
এখানে ক্লিক করুন |
ভারতের ICCR Scholarship | বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা কোনদেশে সবচেয়ে বেশি যায়? পাশের দেশ ভারত! প্রতিবছর ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশন্স থেকে সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভারতে পড়তে যায়। কোরিয়ার বৃত্তির মতো এখানেও স্নাতক পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান ব্যতীত বাকি সব বিষয়েই আবেদন করতে পারবে।
টিউশন ফি সরকার বহন করবে, থাকা-খাওয়ার খরচের ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে সাড়ে দশ হাজার রুপি ভাতা পাবে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা। সার্কুলার প্রকাশিত হয় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড ফর্ম নামিয়ে ফর্মটি পূরণ করে সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মসনদ, একাডেমিক সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, এইচএসসি সিলেবাস, চরিত্রসনদ ও মেডিকেল সার্টিফিকেট যুক্ত করে একটি পিডিএফ ফাইল বানিয়ে সাবমিট করতে হবে। পাসপোর্ট যদি না থাকে তাহলেও উপায় রয়েছে, আবেদনে ‘এপ্লাইড ফর’ লিখে সাবমিট করে দাও। হাই কমিশনকে ফাইলটি মেইলে সাবমিট করার পর তোমাকে লিখিত পরীক্ষার তারিখ জানানো হবে। সেই পরীক্ষাটি হবে শুধু ইংরেজি ভাষায় তোমার দক্ষতার ওপর। লিখিত পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। মনে রাখতে হবে- হাই কমিশনকে মেইলে পাঠানো সেই পিডিএফ ফাইলটির হার্ড কপি নিয়ে যেতে হবে ইন্টারভিউতে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় পর ICCR তোমাকে নির্বাচিত করলে মিলে যাবে স্কলারশিপ! তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় রয়েছে, অল্প কিছু ভাগ্যবান শিক্ষার্থী নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পাবে, বাকিদের ICCR এর নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে পড়তে হবে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে। |
এখানে ক্লিক করুন
|
বিদেশে চাকরি পাওয়ার উপায় (পার্ট টাইম):
বিদেশে পড়তে যেয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা প্রধান যে বিষয়টি নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা হলো পার্ট-টাইম চাকরি। নিজের হাতখরচ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অর্থের তাগিদে রোজগারের জন্য পার্ট-টাইম চাকরি নেওয়া যায়, কিন্তু দিনের একটা বড় সময় ওই চাকরি করার পর ঠিকমতো ক্লাস করা ও পড়াশোনা চালানোর পেছনে সময় দিতে ব্যর্থ হয় অনেকেই।
অনেক সময় দেখা যায় এই কারণে গ্রেড কমতে থাকে, ফলে স্কলারশিপও বাতিল করে দেওয়া হয়। এমনটা হলে বিদেশে পড়তে যাওয়ার যে মুখ্য উদ্দেশ্য, সেটা ব্যহত হয়। তাই বিদেশে গিয়ে আপনি নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কী জাতীয় পার্ট-টাইম চাকরি করতে পারেন, সে ব্যাপারে ধারণা থাকা প্রয়োজন। অনেক দেশে আবার পার্ট-টাইম কাজ করা নিষিদ্ধ।
কোন দেশে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সহজ?
চেষ্টা করলে মোটামুটি সব দেশেরই স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সহজ, তবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, মাল্টা, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল এসব জায়গায় যাওয়াটা সহজ। আর বাকি দেশগুলোয় স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন। যেই দেশেরই ভিসা নেন না কেন, সে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে ভালো ধরণা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার যোগ্যতাটাও তৈরি করতে হবে।
স্টুডেন্ট ভিসা যোগ্যতা ও ভিসা প্রসেসিং-এর ধাপ:
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো অফার লেটারে উল্লেখিত সময়সীমার মধ্যেই প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় ভর্তি বাতিল বলে ধরা হবে। তাই নির্দিষ্ট তারিখের আগেই আপনাকে সেদেশের ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। কোনো দেশে ভিসা পেতে হলে প্রথমে সেদেশের ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে। তা না হলে নির্দিষ্ট দূতাবাস থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য দিয়ে নির্ভুলভাবে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ দূতাবাসে জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট দিনে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহ:
- শিক্ষাগত যোগ্যতা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র: সনদপত্র, নম্বরপত্র, প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ মূলকপি।
- জন্মসনদ
- বর্তমান ও আগের পাসপোর্টের ব্যবহৃত পাতা। পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১ বছর থাকতে হবে এবং পেশা, জন্ম তারিখ ও অন্যান্য সকল তথ্যের সাথে শিক্ষাগত কাগজপত্রের মিল থাকতে হবে।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র বা অফার লেটার।
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র
- ছবি
- পূরণকৃত অর্থনৈতিক সামর্থ্যের (স্পনসর বা গ্যারান্টর) ফরম।
- স্পন্সরের সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে জন্মসনদ, পাসপোর্ট কিংবা স্কুলের কাগজপত্র।
- স্পন্সরের আয়ের উৎসের বিস্তারিত কাগজপত্র।
- সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করার ইতিহাস থাকলে সেখানে কাজের রেকর্ড ও ছাড়পত্র।
- ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র
- স্বাস্থ্যবিমার প্রমাণপত্র
- পুলিশ ছাড়পত্র
বিদেশে পড়াশোনার খরচ:
আপনি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি পাবেন কিনা এর উপর ভিত্তি করে দেশ নির্বাচন করা উচিত, কেননা বিদেশে পড়ালেখার সাথে ব্যয়ের সম্পর্ক রয়েছে। যদি বৃত্তি পেয়ে যান, তাহলে ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং-এ থাকা এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতেও অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি বৃত্তি না পান অথবা আংশিক বৃত্তি পান, সেক্ষেত্রে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী দেশ নির্বাচন করা উচিত।
কারণ, আমেরিকায় সাধারণত গ্রাজুয়েট লেভেলে পড়তে প্রতি বছর বিশ লাখ টাকা লাগে। কানাডায় সেটা পনেরো লাখ টাকা। অস্ট্রেলিয়া ও ইউকেতে পনেরো থেকে আঠারো লাখ টাকা লাগে। মালয়েশিয়া, চীন ও ভারতে মোটামুটি বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতোই পড়ালেখার খরচ।
সেই পরিমাণ অর্থ অবশ্যই ব্যাংকে থাকতে হবে। তবে আপনি যদি স্কলারশিপ পান, স্কলারশিপের শতাংশ এই হিসাবের বাইরে রাখতে পারেন। সেই সাথে ওই দেশে গিয়ে পারিপার্শ্বিক যেসব খরচ হবে, যেমন থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, পোশাক, হাতখরচ, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্যও ব্যাংকে সন্তোষজনক অর্থ দেখাতে হবে। সব মিলিয়ে যদি দেখা যায় যে, টিউশন ফি হিসেবে ১০ লাখ টাকা এবং থাকা-খাওয়ার খরচ হিসেবে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে, তাহলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট হিসেবে অন্তত ২৫ লাখ টাকা দেখালে ভালো।
এইচএসসির পর বাইরে স্নাতক করতে যাওয়ার অসংখ্য সুযোগ আছে। একইসাথে আছে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার সুযোগও। তাই ভালোমতো প্রস্তুতি নিয়েই বাইরে পড়তে যাওয়া উচিত। এসময় বিভিন্ন দালাল কিংবা ফ্রড এজেন্সির লোকেদের থেকে কয়েক হাত দূরে থাকবেন। তারা যেন আপনাদের অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি না করে বসে!
বিদেশে পড়ালেখা করতে যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের অনেকেরই থাকে। অন্য এক দেশে অন্যরকম একদল মানুষের মাঝে পড়ালেখা করা, তাদের সাথে বসবাস করা, ভাবতেই কেমন যেন রোমাঞ্চকর। শুধু কি তাই?। বিদেশে পড়তে যাওয়ার আরো অনেক সুবিধা আছে। তার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও আছে। বিদেশে পড়তে যাওয়ার এইসব সুবিধা-অসুবিধা নিয়েই আজকের এই লেখা।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার সুবিধা
১। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য:
বিদেশে পড়তে যাওয়ার একটা বড় সুবিধা হল নানা রকম সংস্কৃতির মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। সাধারণত বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে অনেকেই পড়তে আসে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে যারা বিদেশে পড়তে যায় তারা নানারকম সংস্কৃতির মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে ওইসব সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক এবং নিয়মনীতি সম্পর্কে জানা যায়। তাছাড়া তাদের চোখে নিজের দেশের সংস্কৃতি কেমন তা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।
২। আত্মনির্ভরশীলতা:
বিদেশে পড়ালেখা করতে গেলে যেটা হয় যে পরিবারের শাসনের মাঝে থাকতে হয় না। এর ফলে তুমি নিজেকে আবিষ্কার করার সুযোগ পাবে। তোমার নিজের কাজগুলো নিজেকেই করতে হবে। যেমন- নিজের রুম পরিষ্কার রাখা, হিসাব করে চলা, যেকোন বিপদে পড়লে তা থেকে নিজে নিজে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করা ইত্যাদি। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে উঠে যেটা পরিবারের সাথে থাকলে অনেক সময় গড়ে উঠে না। এভাবে প্রবাসজীবন একটা মানুষের মাঝে পরিবর্তন এনে তাকে পরবর্তী জীবনের জন্য তৈরি করে তোলে।
৩। বৈচিত্র্যপূর্ণ নেটওয়ার্ক:
যেহেতু বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে, সেহেতু বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে পড়ালেখা করতে হয়, সুতরাং নানা দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়। পড়ালেখা শেষ করেও তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারলে পরিচিত মানুষের একটি সমৃদ্ধ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায় যা চাকরিজীবনের তথা জীবনের বিভিন্নক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
ঘরে বসে Spoken English
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
৪। ক্যারিয়ারের নতুন দিক:
বিদেশে পড়তে গেলে অনেক নতুন নতুন কাজের সাথে পরিচিত হওয়া যায় যেগুলো নিজের দেশে পাওয়া যায় না। কাজগুলো তোমার জন্য শুধুমাত্র নতুনই নয়, তুমি সেই কাজের প্রতি আগ্রহও খুঁজে পাবে। এভাবে তুমি ক্যারিয়ার হিসেবে অনেকগুলো পথের মধ্য থেকে একটি বেছে নিতে পারবে। এটি একটি বড় সুযোগ কারণ এতে করে নিজের পছন্দের কাজকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া যায়। দেশে থাকলে এই সুযোগ কম কারণ দেশে ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে এরকম উন্মুক্ত সুযোগ পাওয়া যায় না।
৫। ভালো চাকুরীর সুযোগ:
যদি তোমার ইচ্ছা থাকে দেশে চাকুরী করা, সেখানেও বিদেশে পড়ালেখা করার একটা সুবিধা আছে। বিদেশের কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করলে তা তোমার সিভিতে প্লাস পয়েন্ট যোগ করবে। ফলে দেশেও এসেও তুমি ভালো প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকুরীতে অপেক্ষাকৃত সহজে যোগদান করতে পারবে। আর বিদেশে থাকাকালীন তুমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ তার সঠিক ব্যবহার করে নিজের ক্যারিয়ারে দ্রুত উন্নতি করতে পারবে।
৬। ঘুরাঘুরি আর এডভেঞ্চারের সুযোগ:
যারা আমার মত ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ কর তাদের জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়া তো একেবার সোনায় সোহাগা। সম্পূর্ণ নতুন একটি দেশে ভ্রমণ করার সুযোগ তো সহজে পাওয়া যায় না। পড়ার জন্য যদি বিদেশে যাও তো পড়ার পাশাপাশি ঘুরাঘুরিটাও ভালোমত করতে পারবে। এতে করে তোমার ভ্রমণপিপাসু মনও বেশ শান্তি পাবে।
৭। দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ:
বিদেশের নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তোমার নানারকম দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে বিদেশে পড়ালেখা। নানাকরম মানুষের সাথে কাজ করা, তাদের সাথে মানিয়ে চলা, তাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে তোমার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে চাকুরী করার ক্ষেত্রে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রথম পছন্দ কিন্তু তুমিই হবে।
এ তো গেলো সুবিধার কথা। সব কিছুরই সুবিধা অসুবিধা আছে, বিদেশে পড়তে যাওয়ার কিছু অসুবিধাও আছে। চলো এবার দেখে আসি অসুবিধাগুলো-
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার অসুবিধা
১। নতুন পরিবেশ:
বিদেশে পড়তে গেলে সর্বপ্রথম যে অসুবিধা হয় তা হল নতুন পরিবেশে মানিয়ে চলার অসুবিধা। একদমই আলাদা খাদ্যাভ্যাস, আলাদা আচার-আচরণ, আলাদা ভাষা, মোটকথা একেবারে আলাদা একটি পরিবেশে গিয়ে পড়বে তুমি। সেখানে তুমি একরকম, আর অন্যরা অন্যরকম। ফলে তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে, মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরণের অসুবিধায় পড়তে হয়।
২। একা একা লাগা:
বিদেশের নতুন পরিবেশে যখন মানিয়ে নেয়া কষ্টকর মনে হবে তখনি তুমি নিজের আগের জীবনটার অভাব অনুভব করা শুরু করবে। ক্ষুধা পেলেই খাবার দেয়ার জন্য মা নেই, বিকেলে আড্ডা দেয়ার জন্য পুরাতন বন্ধুরা নেই, যখন ইচ্ছা তখন ঘুম থেকে উঠার সুযোগ নেই। এইসব কিছু যখন মানিয়ে নিতে না পারার সাথে যুক্ত হবে তখনি তুমি নিজেকে একা একা মনে করবে। এটি বিদেশে পড়তে যাওয়ার একটি বড় অসুবিধা।
৩। অতিরিক্ত প্রত্যাশা:
আমাদের সবারই একটা দোষ আছে। সেটা হল বিদেশে পড়তে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত প্রত্যাশা নিয়ে যাই আমরা। যেই দেশে যাচ্ছি সেই দেশ সম্পর্কে শুধু মুভি আর ইন্টারনেটে যা দেখি সেটুকুই জানি। ফলে এমনিতেই আমরা জানি কম। আর বিদেশ নিয়ে আমাদের মাঝে একটা মোহ আছে। এর ফলে যখন আমরা বিদেশে গিয়ে বাস্তবতার সম্মুখীন হই, তখন সেই মোহটা কেটে যায়।
সেখানে গিয়ে দেখা যায় চাইলেই যেখানে সেখানে যাওয়া যায় না, বিদেশীদের জন্য সেখানে আইন কঠোর ইত্যাদি। আশাভঙ্গ হওয়ার ফলে অনেকেই সেখানে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে না।
৪। ভুল পথে চলে যাওয়া:
বিদেশে পড়ালেখা করতে যাওয়ার আরেকটা বড় অসুবিধা হল ভুল পথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে না পারায় যখন তুমি হতাশ, ঠিক সেই সময়টাই এই ভুল পথে চলে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সহজ সময়। পরিবারের শাসন থেকে হঠাৎ করে মুক্তি পেলে ইচ্ছে করে অনেক কিছুই করতে। বিদেশের মুক্ত পরিবেশে তোমাকে বাধা দেয়ারও কেউ থাকবে না। এর ফলে একটা বেশ বড় সম্ভাবনা থাকে চরিত্রের অবক্ষয় হওয়ার।
৫। পরিবারের খারাপ সময়ে পাশে না থাকতে পারা:
দেশের বাইরে পড়তে গেলে ঐ দেশের আইন বা দেশে ফেরার খরচ ইত্যাদি কারণে দেশে ঘনঘন ফেরার কোন সুযোগ থাকে না। এর ফলে দেখা যায় যে পরিবারের কোন খারাপ সময়ে বা কোন দুঃসংবাদ শুনলে দেশে ফিরে পরিবারের পাশে থাকার সুযোগ হয় না। এর ফলে মনের উপর চাপ পড়ে যাতে করে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে।
৬। খরচ:
অনেক দেশেই জীবনযাপনের খরচ অনেক বেশি যা অনেকের পরিবারের পক্ষেই চালানো সম্ভব নয়। পড়ালেখার খরচ এর পাশাপাশি জীবনযাপনের খরচ চালানোর জন্য সবাইকে পার্টটাইম চাকুরী করতে হয়। এর ফলে নিজের জন্য সময় পাওয়া যায় না। আর পার্টটাইম চাকুরী খুঁজে পাওয়াও বেশিরভাগ সময়ই কঠিন। এই আর্থিক চাপের কারণে পড়ালেখা আর আনন্দ দুটোতেই ব্যাঘাত ঘটে।
বিদেশে পড়তে যাওয়া আমাদের অনেকের কাছেই স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে যখন বিদেশে গিয়ে মানুষ প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজে না পায়। এজন্য আমাদের সকলেরই উচিত আগের সব সুবিধা-অসুবিধা খুঁটিয়ে দেখা, অসুবিধাগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারবো কি না তা দেখা। এই সবকিছু ভেবে বিদেশে পড়ালেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাহলেই সুবিধাগুলোর সঠিক ব্যবহার আর অসুবিধাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।