সম্প্রতি “হতাশ প্রধানমন্ত্রী, হঠাৎ মমতার তরফে বৈঠক বাতিল” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেননি বরং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে মমতাকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় ২৫ আগস্ট “Mamata Banerjee: দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হোক মুখ্যমন্ত্রী মমতার, একান্ত ভাবে চাইছে ঢাকা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভারত সফরে যাওয়ার আগে গত ১৯ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শেখ হাসিনা চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতে আসছেন এবং তিনি আশা করেন সেই সফরে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হবে।
প্রতিবেদনটি থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, সরকারিভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক স্তরে কোনও যোগাযোগ হয়েছে কি না, তা সরকারি কর্তারা বলতে পারছেন না।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাওয়ার পর বাংলাদেশী গণমাধ্যম ‘Banglanews24’ এ গত ৫ সেপ্টেম্বরে “আমি চাইলেও, যেতে দেওয়া হয় না: মমতা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভারত সফরে দিল্লিতে মমতার সঙ্গে দেখা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগ্রহী হলেও এই সফরে ভারত সরকারের তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, সারা পৃথিবীতে আমাকে বক্তৃতা দিতে ডাকলেও আমি যেতে পারি না। কারণ আমাকে যেতে দেওয়া হয় না। তাতে কোনো যায় আসে না। আজকে পবিত্র দিন, ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস। আমি জানি, আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসেছেন। ভারতবর্ষে সম্ভবত ৫ থেকে ৮ তারিখ অবধি উনি আছেন। আমার ও পশ্চিমবাংলার মানুষের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং আমরা প্রণাম ও সালাম জানাই।
পরবর্তীতে ভারতীয় গণমাধ্যম Times of India তে গত ৮ সেপ্টেম্বরে “Mamata pans Centre for not inviting her to be part of Bangladesh PM’s visit India” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তাকে আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিবেদনটিতে মমতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার তার সফরের সময় আমাকে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়নি।
দেশীয় গণমাধ্যম ‘Desh Tv’ এর ফেসবুক পেইজেও গত ৮ আগস্ট “দেখা হয়নি শেখ হাসিনার সঙ্গে, মোদিকে তুলোধুনো মমতার” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ভিডিওটিতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় মমতাকে আমন্ত্রণ না জানানোর ব্যাপারে মমতাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
অপরদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘Times Now News’ এ একইদিনে “CMs are not…’: Officials clarify as Mamata slams Centre for not being part of Bangladesh PM’s visit” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারত সরকার সাধারণত এই ধরনের রাষ্ট্রীয় সফরে মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানায় না।
তবে এসব সফরে রাষ্ট্রীয় কোনো ভোজসভা বা অন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকলে কখনো কখনো মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই প্রতিবেদনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে মমতাকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তার ক্ষোভ প্রকাশের সংবাদটি তুলে ধরা হয়।
এছাড়া Economicstimes, News18 সহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে মমতাকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তার ক্ষোভ প্রকাশের সংবাদটি প্রচার করা হয়।
অপরদিকে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ‘Daily Star’ এর বাংলা বিভাগে গত ৬ সেপ্টেম্বরে “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে দেখা করতে না পারার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রাজনীতির ঊর্ধ্বে। তিনি আমার বোনের মতো। আমি এবার দিল্লিতে তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। কী করা যেতে পারে?’
অর্থাৎ এই প্রতিবেদনগুলো থেকে বুঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ফলে তাদের মধ্যে দেখাও হয়নি।
মূলত, গত ৫ সেপ্টেম্বর ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে যাওয়ার আগে গত ১৯ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতে আসছেন এবং তিনি আশা করেন সেই সফরে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ না জানানোয় তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখা হয়নি৷ কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ না জানানোয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা না হওয়ার বিষয়টিকে সাম্প্রতিক সময়ে মমতার তরফ থেকে বৈঠক বাতিল করা হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, “হতাশ প্রধানমন্ত্রী, হঠাৎ মমতার তরফে বৈঠক বাতিল!” শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি আংশিক মিথ্যা।